স্বর্ণের বার চুরির অভিযোগে ইমন দে (২৬) নামে এক কর্মচারীকে প্রায় ৭২ ঘণ্টা আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওয়াহেদ নামে এক স্বর্ণের দোকান মালিকের বিরুদ্ধে। এছাড়া ক্ষতিপূরণ আদায়ে অটোরিকশা ও জমি বিক্রি করে টাকা আনতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ইমনের মা শিল্পী দে’র।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী যুবক কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানার অপারেশন অফিসার এরশাদুল্লাহ সমিতির কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত দোকান মালিক সমিতিকে অভিযোগ করেননি বলে জানান সংগঠনের সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর।
এ বিষয়ে ইমনের মা শিল্পী দে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত শনিবার (৮ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে ইমনের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, চৌধুরী পাক্তার হাউস নামের দোকানে তাকে আটক রেখে মারধর করা হচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে বলে, শ্যামা বুলিয়ন নামের এক দোকান থেকে ৬টি ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণের বার একটি ব্যাগে নিয়ে চৌধুরী পাক্তার হাউসে গিয়ে বন্ধু শুভ চৌধুরীর সঙ্গে ভেতরে বসে কথা বলছিল। এসময় দোকানে আরও দুজন কর্মচারী ছিলেন। এ সময়ে ইমনকে গোল্ড হাউস বিডি জুয়েলারির মালিক ওয়াহেদ ফোনে বলে দ্রুত বিমানবন্দর যেতে হবে। এরপর ইমন দোকান থেকে বেরিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় দোকান মালিকের একটি মোবাইল ফোন ও ৬টি সোনার বারসহ একটি ব্যাগটি চৌধুরী পাক্তার হাউসে রেখে চলে যান।
পরে বিমানবন্দর থেকে ফিরে জানতে পারেন তার রেখে যাওয়া ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বন্ধু শুভ চৌধুরী সিন্ধুকে রেখেছে। তবে ৬টি সোনার বার পায়নি। এ ঘটনার জানার পর ইমনের মা রোববার (৯ অক্টোবর) রাঙ্গুনিয়ার বাড়ির থেকে আসতে না পেরে পরদিন সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে হাজারীগলি আসেন।
আরও পড়ুন: আলফালাহ গলি থেকে ২৮ ভরি স্বর্ণ চুরি করেছিল ২ যুবক
ঘটনার বিস্তারিত জেনে তিনি উপস্থিত সবাইকে বলেন, আমার ছেলে যদি স্বর্ণের বার চুরি করে থাকে তবে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক এবং একইসঙ্গে দোকানে উপস্থিত শুভ চৌধুরী ও বাকি দুই কর্মচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এসময় ওয়াহেদ, শুভ চৌধুরী, তার জেঠা হারাধন চৌধুরীসহ (অঞ্জলী জুয়েলার্সের মালিক) দুদোকান কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। এসময় তাদের কাছে অনুরোধ করি আমার ছেলেকে না মারতে। যদি প্রয়োজন হয় তার বিরুদ্ধে আমিসহ গিয়ে থানায় মামলা করব।
এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ডিবি পরিচয়ে পাঁচজন লোক আসেন জানিয়ে ইমনের মা বলেন, তারা আমার ছেলেকে বাইরে নিয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জেরা করেন। কিন্তু ওইসময় দোকানে উপস্থিত থাকা শুভ চৌধুরী ও তার দুকর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। এরপর রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় আমি বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি। নগরের দিদার মার্কেট মোড় এলাকায় যেতেই আমার ফোনে আবারও কল আসে। এসময় ইমন কান্না করে বলে তাকে মারধর করা হচ্ছে। আমি আবার দ্রুত হাজারীগলি যাই।
তিনি বলেন, আমি যাওয়ার পর দেখি ইমনের কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। এরপর তারা আমাকে সামনের একটি রুমে বসিয়ে রেখে ভেতরের রুমে আমার ছেলেকে মারধর করছিল। ভেতরের রুম থেকে তার কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। এসময় তারা আমার কাছ থেকে একটি কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেন। কাগজে লিখা ছিল ৬টি সোনার বারের দাম ৪৬ লাখ টাকা। এ টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া গত দুমাস আগে আমার কাছ থেকে আনা সাড়ে ৫ লাখ টাকাও তারা ক্ষতিপূরণ বাবদ নিয়ে নিয়েছে।
ইমনের মা অভিযোগ করে বলেন, সোমবার দুপুরে কোতোয়ালী থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে থানার অপারেশন অফিসার এরশাদুল্লাহ জুয়েলারি সমিতির সভাপতিকে ফোন নম্বর দেন। এসময় জুয়েলারি সমিতির সভাপতির সঙ্গে কথা হলে তিনি রাত ৭টায় তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এর মধ্যে দুপুরের দিকে আমার ফোনে কল আসে ইমনের অন্য বন্ধু রকির। সে জানায়, ইমনের আদেশে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকায় অটোরিকশা বিক্রি করা হয়েছে। এ টাকা তাদের দিয়ে আসতে বলেছে। তাছাড়া ইমনসহ তার তিন বন্ধু মিলে একটি জমি কিনেছিল সে জমিও তারা জোর করে বিক্রি করিয়েছে মাত্র তিন লাখ টাকায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জুয়েলারি সমিতির সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
আরও পড়ুন: ৪ চোরে ঐক্যজোট—৩ জন করে চুরি, আরেকজন স্বর্ণ গলিয়ে বানায় বার
পরে ইমনের মাকে সন্ধ্যা ৭টায় আসার কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ও আচ্ছা। আমাকে এক এসআই ফোনকলে বিষয়টি জানান। বিস্তারিত জানতে ছেলেটির মাকে সন্ধ্যা ৭টায় আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি এখনও আসেননি। কিন্তু কেউ অপরাধ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে মারধর করা অপরাধ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে এ ঘটনায় সমিতিকে অভিযোগ দেওয়া হয়নি বলে জানান মৃণাল কান্তি ধর।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবির আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, স্বর্ণ চুরির অভিযোগ এনে আজ (সোমবার) রাতেই হাজারী গলির এক ব্যবসায়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ওই যুবক এখন থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন।
আরএস/আরবি