স্বপ্ন দেখাচ্ছে আনন্দ শিপইয়ার্ড, সবচেয়ে বড় জাহাজ গেল যুক্তরাজ্যে

দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে আনন্দ শিপইয়ার্ড। আনন্দ গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানটি দেশে তৈরি জাহাজ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সক্ষমতা দেখিয়েছে, যা খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।

দেশের বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি দেশে নির্মিত মাল্টিপারপাস কার্গো জাহাজ যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করে শতকোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আরও সম্ভাবনাময়ী করে তুলেছে।

জানা যায়, বেসরকারি খাতে দেশের সর্ববৃহৎ জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘আনন্দ শিপইয়ার্ড এন্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড’ ১৯৮৩ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ‘আনন্দ বিল্ডার্স’ নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ব্যবসার পরিসর বেড়ে গেলে ১৯৮৫ সালে তা মেঘনা নদীর পাশে স্থানান্তরিত করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থান। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির ধারণক্ষমতা আরও বাড়িয়ে নতুন নামকরণ করা হয় ‘আনন্দ শিপইয়ার্ড এন্ড স্লিপওয়েজ’। এ প্রতিষ্ঠানটি দেশে নির্মিত এ পর্যন্ত ৩৫৬টি জলযান দেশি-বিদেশি ক্রেতার কাছে সরবরাহ করেছে।

আরও পড়ুন: আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে হঠাৎ ব্রেক প্রাইভেট কারের, ধাক্কা খেয়ে রক্তাক্ত অটোরিকশা চালক—নারী

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত ‘স্টেলা মেরিস’ নামে একটি অত্যাধুনিক কনটেইনার জাহাজ ডেনমার্কে রপ্তানির মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ডেনমার্ক, জার্মান, নরওয়ে, মোজাম্বিকসহ বিভিন্ন দেশে জাহাজ রপ্তানি করছে।

এ বিষয়ে আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ বারী বলেন, ২০০৮ সালে ডেনমার্কে ‘স্টেলা মেরিস’ নামের অত্যাধুনিক জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে দেশে তৈরি জাহাজ প্রথম আমরাই বিদেশে রপ্তানি করেছি। পরের দুবছরে আমরা আরও ১১টি জাহাজ বিদেশে রপ্তানি করেছি। মাঝখানে নানা জটিলতায় এ খাতে সুবিধা করতে না পারলেও সম্প্রতি আবারও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন করা হলো।

দেশের বৃহৎ এই জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে রপ্তানির জন্য ২০১২ সালে একটি মাল্টিপারপাস জাহাজ নির্মাণ করেছিল। তবে তা জার্মানিতে আর রপ্তানি করা হয়নি। এ পর্যন্ত রপ্তানি হওয়া জাহাজের মধ্যে সর্ববৃহৎ এ জাহাজটি রপ্তানি করা হয় যুক্তরাজ্যে। ৬ হাজার ১০০ টন ধারণ ক্ষমতার এ জাহাজটি গত ১৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের এনজিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেডকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এটি রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

এছাড়া মাল্টিপারপাস এ জাহাজটি ৩৬৪ ফুট লম্বা, ৫৪ ফুট প্রস্থ ও ২৭ ফুট গভীরতা সম্পন্ন। সমুদ্রে চলার পথে জাহাজটি ৪ ফুট গভীর ভাসমান বরফের টুকরা ভেঙে তার যাত্রা এগিয়ে নিতে পারবে। এর ইঞ্জিনের ক্ষমতা ৪ হাজার ১৩০ হর্স পাওয়ার এবং এর গতি ১২.৫ নটিক্যাল মাইল। এছাড়া এ জাহাজে রয়েছে একটি অটোমেটিক ইঞ্জিন, যার সাহায্যে জাহাজটি ১৬ ঘণ্টা অনায়াসে চলতে পারবে।

আনন্দ শিপইয়ার্ডের বিশাল মাল্টিপারপাস জাহাজ যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হওয়াকে গর্বের বিষয় আখ্যা দিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ একটি অত্যাধুনিক মাল্টিপারপাস জাহাজ যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করল। এভাবে জাহাজ রপ্তানি করা গেলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। ভবিষ্যতে এ শিল্পটি তৈরি পোশাক শিল্পের কাছাকাছি রপ্তানি আয় অর্জন করতে পারবে বলে মনে করছি। আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেও সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে পারিনি এতদিন। এ খাতকে এগিয়ে নেওয়া জরুরি, কারণ এটি খুবই সম্ভাবনাময়ী একটি খাত।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!