সেই পাপ্পী—ববির সঙ্গে একাধিক ছবিতে পুলিশ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ‘সন্ত্রাসী হানিফ’

নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যও দাবি ববির

চট্টগ্রামে এখন আলোচনার কেন্দ্রে পুলিশের হেফাজত থেকে মাদক কারবারি হানিফকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা। সন্ত্রাসী হানিফের সঙ্গে বেশকিছু ছবি পাওয়া গেছে বোয়ালখালীর সেই পাপ্পী ও ববির। অথচ এর আগে মনছুর আলম পাপ্পি এক ভিডিওবার্তায় বলেছিলেন, তাঁর ভাই মো. আলম ববি মাদক ব্যবসায়ী।

এদিকে পলাতক হানিফের সঙ্গে পাপ্পি-ববির সম্পর্কের খোঁজে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ মাঠে রয়েছে বলে সিএমপি সূত্রে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে সেসব ছবি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পাপ্পী-ববির হাত ধরেই মাদক কারবারির গডফাদার বনেছেন হানিফ?

আলোকিত চট্টগ্রামের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। মোহাম্মদ আলম ববি মাওয়া গ্রুপের স্বত্বাধিকারী। ওই প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে হানিফ নিজের মেয়ের নাম রাখেন জান্নাতুল মাওয়া। তাছাড়া পাপ্পী ও ববি দুজনের সঙ্গেই তার একাধিক ছবি পাওয়া গেছে। এসব ছবিতে হানিফের ঘনিষ্ঠতার চিত্রও উঠে এসেছে।

এদিকে আলোকিত প্রতিবেদক হানিফের কথা তুলতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন ববি। অচেনা কিছু ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ তুললেও হানিফের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। অথচ এর আগে এক ভিডিওবার্তায় ববির ফোন নম্বর উল্লেখ করে তাঁর বড় ভাই পাপ্পী বলেন, ‘আমার মুখে নয়, প্রশাসন তার নম্বর ট্র‍্যাক করে কি কি পায়, তা তখন প্রমাণ পাবেন। কতবড় নেটওয়ার্কিংয়ের লোক।’

ববির উদ্দেশ্যে ফেসবুক লাইভে পাপ্পী বলেন, ‘অনুমোদনহীন ১০ কোটি টাকার জাহাজ বানাচ্ছেন প্রশাসন শুনছে না? কিসের এত খুঁটির বল আপনার? কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির পাশে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছেন। আপনার এলপিজি গ্যাস পাম্প, জাহাজ, বিল্ডিং, বাগানবাড়ী, আপনার প্রাডো, বিশাল সম্পত্তির মালিক, ছেলেমেয়েদের নামে এতগুলো টাকার এফডিআর। এত টাকা কোত্থেকে পেলেন? ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলের সাথে কি মিল আছে?’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে পাপ্পী বলেন, ইয়াবা বাণিজ্য বন্ধ না হলে আমাদের দেশের যুব সমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাবে। ছেলে-মেয়েদের মানুষ করা যাবে না।

মাদকের বাণিজ্য পরিচালনা করায় আপন ভাই ববির বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে এভাবে বলেন পাপ্পী। এসব বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় মো. আলম ববির সঙ্গে।

ববি নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য পরিচয়ে বলেন, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হানিফের ছবি আছে। ছবি থাকলে কী এমন হয়? আমি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য। হয়ত আমি আপনাকে চিনি, আপনিও আমাকে চিনেন।

তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার পারিবারিক দ্বন্দের কারণে ভিডিওবার্তায় অনেক কিছু বলেছেন, যা ভাইরাল হয়েছে। উনার সঙ্গে আমার কিছু নেই। এছাড়া কালুরঘাট এলাকায় কী হয় তা প্রশাসন থেকে জেনে নেন। কারণ ঘাটের পাশেই পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।

হাসান নামে এক ব্যবসায়ীর কথা উল্লেখ করেন ববি। এরপর অন্য কোনো বিষয়ের উত্তর না দিয়ে ফোনকল বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনছুর আলম পাপ্পীর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এর আগে শনিবার (১৯ নভেম্বর) হানিফকে ৫ হাজার ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। আটকের খবরে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে হানিফকে পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ইয়াছিন ও হানিফের বোন নাজমা আক্তার নাজু। আহত হন আরো তিন পুলিশ সদস্য।

এ ঘটনার পরপরই বস্তিতে অভিযান চালায় পুলিশ। চান্দগাঁও থানা ও সিএমপির দাঙ্গা পুলিশের বিশাল বহর ঘণ্টাজুড়ে অভিযান চালায়। এতে তিন হিজড়াসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক হানিফকে গ্রেপ্তারে এখনও চলছে অভিযান। তবে এসব বিষয়ে সিএমপি কোনো তথ্য নিশ্চিত করেনি।

জানা যায়, পাপ্পীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযোগে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ।

নিজের অপরাধ ঢাকতে দলবল নিয়ে পাপ্পী সক্রিয় হয়ে উঠেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। বর্তমানে তিনি বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে বোয়ালখালী পৌর মেয়র পদে নির্বাচনের স্বপ্নও দেখছিলেন মো. মনছুর আলম পাপ্পী।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!