‘সুপারিশকাণ্ড’—হেফাজত নেতার জামিন পেতে আওয়ামী লীগ নেতার ‘প্রত্যয়নপত্র’

হাটহাজারীতে হেফাজতের সহিংস তাণ্ডবের ঘটনায় গ্রেফতার উজায়ের আহমেদ হামিদীর পাঁচ মামলায় জামিন নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তিনি হেফাজতে ইসলামের হাটহাজারী উপজেলা শাখার দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক।

৪ মে চারটি মামলায় জামিন পান তিনি। ১২ মে জামিন পান অপর মামলায়। সহজেই তাঁর জামিন পাওয়ার কারণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান স্বাক্ষরিত ‘প্রত্যয়নপত্র’।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী উজায়েরের জামিন বাতিলের আবেদন করলে ঈদের দিন শুক্রবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বেঞ্চ সহকারীর মাধ্যমে তাঁর পরোয়ানা পাঠানো হয় হাটহাজারী থানায়।

গ্রেফতারের একমাসের মধ্যে উজায়েরের জামিন নিয়ে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও বিস্মিত। ১৪ মে জামিনে বের হলে কারাগারের গেট থেকেই গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, ১২ এপ্রিল গ্রেফতার হন উজায়ের। এর আগে ১ এপ্রিল তাকে দলীয় প্যাডে সক্রিয় কর্মী ঘোষণা দিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন সোহরাব হোসেন চৌধুরী। আর এই প্রত্যয়নপত্রটি পাঁচ মামলার জামিন আবেদনে সংযুক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের জোরালো বিরোধিতা না থাকায় তাঁর জামিন সহজেই হয়ে যায়।

প্রত্যয়নপত্রে লেখা ছিল, ‘উজায়ের আহমেদ হামিদী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে সবসময় দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে হাটহাজারী পৌরসভা আওয়ামী লীগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন সক্রিয় কর্মী ও নেতা। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।’

সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক জেলা ও নগরের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, দলের নেতা হিসেবে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে সোহরাব খারাপ নজির সৃষ্টি করেছেন।

এই প্রত্যয়নপত্রের কারণে উজায়েরের জামিন সহজ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে প্রত্যয়নপত্র প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন নোমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘উজায়ের ২০০৪ সাল থেকে ছাত্রলীগ করছে। তিন বছর ধরে সে দলের সকল কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। আমার সাথে অনেক প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছে, বক্তৃতা করেছে। এসবের ছবিও আছে আমার কাছে। সে দলের দুঃসময়ের কর্মী। এখন আমি যদি তাকে প্রত্যয়নপত্র না দেই, সেটা খারাপ দেখায়। ভবিষ্যতে কেউ আর দল করতে আগ্রহী হবে না। তবে সে হেফাজতের এসব কাজে জড়িত হলেও তা আমার জানা নেই। তাকে আটকের পর ওসি আমাকে কল করে তার হেফাজত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জানতে চাইলে আমি চালান করে দিতে বলেছি।’

এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘উজায়ের আহমেদ হামিদী হেফাজতে ইসলামের হাটহাজারী উপজেলা শাখার দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক। এর বাইরে উনি কোনো রাজনীতি করেন কি-না, আমাদের জানা নেই। হাটহাজারীতে তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবে আইনি পদক্ষেপ নেবো।’

উজায়েরকে গ্রেফতারের পর সোহরাব হোসেন নোমান থানায় কোনো সুপারিশের জন্য এসেছিলেন কি-না জানতে চাইলে ‘জানেন না’ বলে মন্তব্য করেন ওসি রফিকুল ইসলাম।

উজায়ের আহমেদ হামিদী হেফাজতের যেকোনো কর্মসূচিতে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিতেন। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে তিনি সবসময় সরব। এছাড়া হাটহাজারীতে তিনি কট্টর সরকারবিরোধী হিসেবেও পরিচিত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হাটহাজারী থানায় ভাংচুর এবং ভূমি অফিসে আগুন দেওয়াসহ সব তাণ্ডবে তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে ।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!