সরকারি জমিতে বদরখালী সমিতির প্লট বাণিজ্য—দুদিনেই হয়ে গেল ৭০ প্লট!

চকরিয়ায় কোটি টাকার সরকারি খাস জমিতে প্লট বাণিজ্য শুরু করেছে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতি। দখল করা জমিতে ইতোমধ্যে ৭০টির প্লট তৈরি করা হয়েছে মাত্র দুদিনে।

এদিকে অবৈধ দখল ও প্লট বাণিজ্যের বিরুদ্ধে রিদুয়ানুল হক নামের স্থানীয় একজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে। দিনদুপুরে কীভাবে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ প্লট গড়ে উঠেছে এ নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: মাদ্রাসার পাশে চোরাই বাণিজ্য, যুবকের কাছে হাজার হাজার লিটার ডিজেল—অকটেন

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের বদরখালী বাজারের পশ্চিমে পাউবোর বেড়িবাঁধের সঙ্গে লাগোয়া জমি দখল করে এ প্লট বাণিজ্য চলছে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুদিনে সমিতির কর্মকর্তারা শতাধিক শ্রমিক দিয়ে দিন-রাত কাজ চালিয়ে ৭০টি প্লট তৈরি করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্লট তৈরির ওই জায়গার জলাধার ভরাটের মাধ্যমে শ্রেণী পরিবর্তন করার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জম হোসেন বদরখালী সমিতিকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইসঙ্গে ভরাট জায়গা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন।

জরিমানার টাকা পরিশোধে অভিযুক্ত করা হয় সমিতির সভাপতি নুরুল আলম সিকদার, সাধারণ সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী ও বালু উত্তোলনকারী একে ভুট্টো সিকদারকে। কিন্তু জরিমানার টাকা না দেয়ার কৌশল হিসেবে সেসময় বদরখালী সমিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। এরপর প্রায় দুবছর নীরব থাকার পর আবারও একই জায়গায় নতুন করে প্লট বাণিজ্য শুরু করেছে বদরখালী সমিতির বর্তমান কর্মকর্তারা।

ইউএনওর কাছে অভিযোগকারী রিদুয়ানুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দুবছর আগে জলাধার ভরাটের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর জড়িতদের জরিমানা করে বালু অপসারণ করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই আদেশ অভিযুক্তদের কেউ পালন করেনি। অন্যদিকে জরিমানা ও ক্ষতিপুরণের টাকা পরিশোধ না করতে রিট মামলা করা হয়। তবে ২০১৯ সালের ২৬ জুন হাইকোর্ট সেই রিট খারিজ করে দেন।

আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীকে দিয়েও চলছে ইয়াবার বাণিজ্য!

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.নুরুল আমিন জনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জলাধার ভরাট করা জায়গাটি জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানের সম্পত্তি এটা সত্য। কিন্তু সেই জায়গা আমরা (সমিতি) অনেক আগে বন্দোবস্তি নিয়েছি। সমিতির আগের পরিষদ ওই জায়গায় ৬৭ জন সদস্যকে শেয়ার হিসেবে একটি করে দোকানঘর বরাদ্দ দিয়েছে। এখন আমরা সেখানে প্লটভিত্তিক শেয়ারের বরাদ্দ বুঝিয়ে দিচ্ছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের করা জরিমানা ও আদেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে রিট করেছি।’ তবে প্লট নির্মাণের নির্দেশনা আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বদরখালীতে সরকারি খতিয়ানের জমিতে প্লট নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি তহসিলদার ও পুলিশ পাঠিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সাইনর্বোড টাঙানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্মাণ করা প্লটের অবকাঠামো দুদিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি তারা নির্দেশনা না মানেন তাহলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!