হাসপাতালের পক্ষে ‘অর্থলোভী শকুনের দল’—কড়া সমালোচনার মুখে সুজন

মাহতাবের বাসায় গেলেন সুজন-বাবুল

সিআরবি ইস্যুতে ফের সমালোচনার মুখে পড়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। এবার সুজন সিআরবিতে হাসপাতালের পক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীদের তুলনা করলেন ‘অর্থলোভী শকুনের দলের’ সঙ্গে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে সুজনের এ মন্তব্য ’শিষ্টাচারবহির্ভূত’— এমনটিই বলছেন খোদ দলের সিনিয়র নেতারা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসকের এমন মন্তব্যে হতাশ আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরাও।

এদিকে অশালীন এই মন্তব্য করার পরই তোপের মুখে পড়ে আজ (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যান খোরশেদ আলম সুজন। এ সময় তিনি ‘অনুশোচনা’ও প্রকাশ করেন। সুজনের সঙ্গে মাহতাবের বাসায় যান সিআরবির হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনের আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী।

সুজন

উল্লেখ্য, ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি লাইভে হাসপাতাল ও রাজনীতি শিরোনামে আলোচনায় খোরশেদ আলম সুজন ওই মন্তব্য করেন। সিআরবিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত হাসপাতাল স্থাপনের বিরুদ্ধে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে একের পর এক বিরূপ মন্তব্য করে আসছিলেন সুজন। এবার সরাসরি টকশো, মিছিল মিটিংয়ে বসে ব্যাঙ্গাত্মক শব্দ ব্যবহার করে নানামুখী মন্তব্য করে যাচ্ছেন প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁর এসব মন্তব্যকে উদ্দেশ্যমূলক এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

আরও পড়ুন: ‘হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনে’ এবার জুতার বাড়ির ‘বাড়াবাড়ি’—হঠাৎ সুর বদল সুজনের

এদিকে ‘শিষ্টাচারপরিপন্থী বক্তব্য না দিয়ে সরকারি যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়াই সমুচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

নঈম উদ্দিন চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এটি কারোরই মতামতের উপর নির্ভর নয়, এটি সরকারি সিদ্ধান্ত। এই সরকার পরিবেশবান্ধব, প্রধানমন্ত্রীও পরম পরিবেশবান্ধব। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি পরিবেশবাদী দেখানোটাও এক ধরনের অপচর্চা। তাই শালীনতার সঙ্গে বক্তব্য রাখলে নিজের ব্যক্তিত্বও ফুটে উঠে মানুষের সামনে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শিষ্টাচারপরিপন্থী কোনো বক্তব্য সমুচিত না। আমরা তো সবসময় আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। দুঃসময়েও মাঠ ছেড়ে পালায়নি। দল থেকে কী পায় আর না পায় কখনোই হিসাব-নিকাশ করার সময় হয়ে উঠেনি আজো। কিন্তু আমার প্রাণের আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত কিংবা দলীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কখনোই অবস্থান নিইনি। এছাড়া রাজনীতির দীর্ঘ জীবনে মাঠে-ময়দানে কিংবা ঘরোয়া বৈঠকেও কখনোই অশালীন ও অযাচিত শব্দ প্রয়োগের কোনো নজির নেই। সমালোচনারও স্তর আছে। শালীনতার মধ্যেই সমালোচনা করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল হওয়ার বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত। হাসপাতাল হবে-কি হবে না সেটি সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। আগেও বলেছি আমি সিআরবিতে হাসপাতাল হওয়ার পক্ষেও না, বিপক্ষেও না। আমি সংগঠনের দায়িত্বে আছি। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা মেনে নিবো।

সিআরবি আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অশালীন বক্তব্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আওয়ামী লীগের পদে থেকে যারা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন, তাদের উচিত ছিল—আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেই হাসপাতাল নিয়ে কথা বলা। কিন্তু এটি না করে শোকের মাসেও একতারা বাজিয়ে, ঢোল পিটিয়ে, হারমোনিয়াম বাজিয়ে আন্দোলনের নামে কী করেছেন ওই নেতারা? এটি তো আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ হতে পারে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস অনেক গভীর। সিআরবিতে হুঙ্কার দিয়ে, অশালীন বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা উচিত না। এসব নেতাকে হাসপাতাল নিয়ে সঠিক ও সত্য কথা মানুষের সামনে তুলে ধরারও আহ্বান জানান মাহতাব।

আরও পড়ুন: ‘গাছের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা’—পেরেক ঠুকে সিআরবিতে ‘পরিবেশ’ আন্দোলন সুজনের

একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অশালীন, অযাচিত, আক্রামণাত্মক বক্তব্য ও হুঙ্কারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত সিআরবি হাসপাতাল প্রকল্প পিছিয়ে যেতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই পরিবেশবান্ধব। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম হাসপাতালের বিরোধিতা করে এক নেতা ‘পরিবেশের’ কথা বলে আন্দোলন করছেন, হঙ্কার দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারেরও চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেকে বিশ্বনেতা বানিয়ে তুলতে চান।

আ জ ম নাছির বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ বোকা নয়। এটি ডিজিটাল সময়। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলন করে নিজেকে নেতা বানানো যায় না। নেতা হতে হলে মানুষের হৃদয়ের দরজায় যেতে হবে।

সাবেক এ মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরও হাসপাতাল প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চান। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলার আগে ওই নেতার দরকার ছিল দলীয় ফোরামে কথা বলা। কিন্তু তা করা হয়নি। বরং প্রকল্পের বিরোধিতার নামে শৃঙ্খলাভঙ্গের চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য কি-না তাও ভেবে দেখা দরকার।

তিনি বলেন, ‘প্রকল্প নিয়ে যে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে, তা কোনো ত্যাগী রাজনীতিবিদের পক্ষে সম্ভব না। এটি চরম মিথ্যাচার ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। ফেসবুকে সিআরবির শিরিষতলার ছবি দিয়ে অপপ্রচার করে নেতা হওয়া যায় না।

তিনি প্রশ্ন করেন, হাসপাতালের স্থান কি সিআরবির শিরিষতলায় নাকি গোয়ালপাড়ায়? কিন্তু হাসপাতালকে সিআরবির শিরিষতলায় দেখিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা কার স্বার্থে? চট্টগ্রামের স্বার্থবিরোধী কাজে আওয়ামী লীগ কখনোই সমর্থন দেয়নি। এরপরও আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে কেন? এই চট্টগ্রাম আন্দোলন—সংগ্রাম ও মানুষের অধিকার আদায়ের চট্টগ্রাম। এখানে কোনো মিথ্যাচারের স্থান নেই।

আরও পড়ুন: চসিক ‘প্রশাসক’ সুজনের অনিয়মের ‘খোঁজ’—প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যেই

এর আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বাংলাদেশ লাইভের এক অনুষ্ঠানে বলেন, আজকে কিছু অর্থলোভী শকুনিরা এটাকে টেনে ধরছে। সিআরবির জায়গাগুলো রেলের ব্যক্তিগত সম্পত্তি না। হুকুম দখল সম্পত্তি। রেলওয়ের স্থাপনা বাড়ানোর জন্য দিয়েছে। কিন্তু যে হাসপাতালটি করার জন্য চেষ্টা করছে সেটা কি রেলওয়ে স্থাপনার মধ্যে পড়ে?

এ বিষয়ে কথা বলতে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!