শিশুর যৌন নিপীড়নের টাকায় মেরামত হবে সরকারি রাস্তা!

মিরসরাইয়ে মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীকে (৬) যৌন নিপীড়নের ঘটনা ৩০ হাজার টাকা জরিমানায় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার জরিমানার সেই টাকা দিয়ে নাকি মেরামত হবে সরকারি রাস্তা!

যৌন হয়রানি করা অভিযুক্ত বৃদ্ধের নাম মিরাজ উদ্দিন খান (৬৫)। তিনি উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ আমবাড়িয়ার আব্দুল লতিফ পাঠান বাড়ির আব্দুল লতিফের ছেলে।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মিরাজ উদ্দিন খানের মুদির দোকানের ওই শিশুকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। এরপর রাত ৯টায় সালিশ বসে। এতে টাকার বিনিময়ে এ ঘটনায় ধামাচাপা দেওয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনা পুলিশ ও সাংবাদিক কারো কাছে না বলতে সতর্ক করার পাশাপাশি সমাজচ্যুত করার হুমকি দেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউসুফ হারুন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে মাদরাসায় বিরতির সময় কলম কিনতে দোকানে গেলে বৃদ্ধ মিরাজ ওই শিশু শিক্ষার্থীকে জোর করে তার দোকানের ভেতরে নিয়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন। এ ঘটনা কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন মিরাজ। এরপর দুপুরে গোসল করার সময় বিষয়টি শিশুর মায়ের নজরে আসে। তখন জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ভয়ে মাকে সবকিছু খুলে বলে ওই শিক্ষার্থী।

এরপর ঘটনাটি মেম্বার ও সমাজের সর্দারদের জানানো হয়। ওইদিন রাতে স্থানীয় মেম্বারের নেতৃত্বে সালিশ বসে। সালিশে যৌন নিপীড়নের কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত মিরাজ খান। এসময় এলাকার মেম্বার এবং সমাজের সর্দাররা তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, কান ধরিয়ে উঠবস ও একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন।

এছাড়া শিশুর পরিবার থেকেও জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয় এবং থানা-পুলিশকে না জানাতে সতর্ক করে সমাজচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী শিশুর মা জানান, আমার স্বামী ও দেবর প্রবাসে থাকে। বাড়িতে শুধু আমরা মহিলারা থাকি। তাই তারা যা করেছে তা মেনে নিতে হচ্ছে। জরিমানার ৩০ হাজার টাকা নাকি সরকারি রাস্তা মেরামতের কাজে ব্যয় করবে বলে আমাদের দেয়নি। আমি আমার মেয়ের নিরাপত্তা ও ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ইউসুফ হারুন বলেন, সালিশে সমাজের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সকলের সম্মতিতে বিচার করা হয়েছে। তবে কোনো জরিমানা ও মুচলেকা নেওয়া হয়নি।

এদিকে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয়পক্ষ থেকে নেওয়া ১শ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প এবং সালিশে উপস্থিত ১৩ জনের স্বাক্ষর করা একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তবে স্ট্যাম্পে মেম্বার ইউসুফ হারুনের স্বাক্ষর নেই।

এদিকে অভিযুক্ত মিরাজ উদ্দিন খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, শিশু যদি ধর্ষিত না হয় উভয়পক্ষের সম্মতিতে মীমাংসা করা সম্ভব। তবে শরীরে যৌন নিপীড়নের আলামত থাকলে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএ/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!