‘লোভেই মৃত্যু’—দেড় লাখ টাকায় খুনি কুলসুমার বদলে জেল খাটেন মিনু

২০০৬ সালে কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় পোশাককর্মী কোহিনুর আক্তার খুনের ঘটনায় গত ৩০ নভেম্বর কুলসুমা আক্তার কুলসুমীর যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেন আদালত।

কুলসুমা সাজার বিষয়টি জানতে পারে আলোচনা করেন মর্জিনার সঙ্গে। মর্জিনা আলোচনা করেন মো. শাহাদাত হোসেন এবং শাহাদাত মো. নুর আলম কাওয়ালের সঙ্গে।

আলোচনার পর নুর আলম ও শাহাদাত দেড় লাখ টাকার চুক্তি করে কুলসুমার পরিবর্তে আরেকজনকে জেলে পাঠানো হবে বলে মর্জিনাকে জানায়। মর্জিনা কথাটি কুলসুমাকে জানালে তিনি রাজি হয়ে যান। শাহাদাতের পরামর্শে মর্জিনার সেই প্রতিবেশি মিনু আক্তারকে টাকার লোভ দেখান এবং এক মাসের মধ্যে জামিনের আশ্বাস দেন। শাহাদাত ও মর্জিনা ২০১৮ সালের ১২ জুন মিনুকে কুলসুমা সাজিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠায়।

মিনু জেল যাওয়ার পর শাহাদাত ও নুর আলম চুক্তির দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। তবে মর্জিনা ও কুলসুমা টাকা দিতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে টাকা দিতে না পারায় একটি সালিশী বৈঠক হয়। একপর্যায়ে মর্জিনা এবং কুলসুমা টাকা না দিয়ে আত্মগোপন করেন। এর মধ্যে মো. শাহাদাত ও নুর আলম মিলে ছিন্নমূল এলাকায় থাকা কুলসুমা ও মর্জিনার দুটি প্লট জোরপূর্বক দখলে নেয়।

গত দুই দিনের রিমান্ড শেষে আসামি কুলসুমা ও সহযোগী মর্জিনা এমনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আদালতে। জবানবন্দি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রোববার (১ আগস্ট) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দিন আহমেদের আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা।

এদিকে গত ৩১ জুলাই (শনিবার) রাতে জঙ্গল সলিমপুর কালাপানিয়া দরবেশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কুলসুমা আক্তার কুলসুমীর দুই সহযোগী মো. নুর আলম কাওয়াল (৪৮) ও মো. শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

এর আগে গত ২৯ জুলাই রাত ৩টায় ইপিজেড থানাধীন ২ নম্বর মাইলের মাথা কমিশনার গলি থেকে মর্জিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। মর্জিনার তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, ২০০৬ সালে কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় পোশাককর্মী কোহিনুর আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে আত্মহত্যা বলা হলেও পুলিশি তদন্তে উঠে আসে কোহিনুরকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছিল।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজামউদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কোহিনুর আক্তারকে হত্যার দায়ে আদালত সাজা দিয়েছিলেন কুলসুমা আক্তারকে। কুলসুমা নিজেকে বাঁচাতে মর্জিনার সঙ্গে পরার্মশ করে। পরে মর্জিনা তাকে শাহাদাত ও কাওয়াল নামে দুইজনের সন্ধান দেয়।

ওসি নেজাম আরও বলেন, শাহাদাত ও কাওয়াল দুইজন দেড় লাখ টাকার চুক্তি করে নিরপরাধ মিনু আক্তারকে আদালতে পাঠায়। তাদের দুজনকে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শাহাদাত হোসেনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে হাজির করা হলে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং কাওয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, প্রায় ৩ বছর বিনা অপরাধে সাজাভোগের পর বুধবার (১৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন।

এরপর গত ২৮ জুন বায়েজিদ লিংক রোড সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মিনু আক্তার। নিহত হওয়ার পর ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে মিনুর মরদেহ দাফন করা হয়।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!