নগরের হালিশহরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা ইশিকা মির্জা চৌধুরী। প্রতিদিন পত্রিকা নিতেন বাসায়৷ কিন্তু গত মাস থেকে তিনি পত্রিকা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
কারণ জানতে চাইলে শিক্ষিকা ইশিকা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে পত্রিকার দাম৷ যেভাবে খরচ বেড়েছে সে তুলনায় আয় বাড়েনি। ফলে সংসারে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। তাই খরচের লাগাম টানতে বন্ধ করে দিয়েছি পত্রিকা নেওয়া।
শুধু ইশিকা নন। তাঁর মতো আরও অনেকেই খরচ কমাতে বাসায় নিয়মিত পত্রিকা নেওয়া বন্ধ করেছেন৷
এদিকে নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ায় সঙ্কটের মুখে প্রিন্ট সংবাদমাধ্যম। কাগজের দাম বাড়তে থাকায় পত্রিকা ছাপাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রিন্ট মিডিয়া হাউসগুলোকে৷
এদিকে কাগজের সঙ্কট ও দাম বাড়ায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকার দামও আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। আবার অনেক পত্রিকা দাম না বাড়ালেও কমিয়ে দিয়েছে পৃষ্ঠা সংখ্যা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজের দাম বাড়তে থাকায় দ্রুত সংকটের মুখে পড়বে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম। সেইসঙ্গে বন্ধ হতে পারে অনেক ছাপাখানা।
স্থানীয় পত্রিকা মালিক ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বললে তারা এমন সঙ্কট ও হতাশার কথা তুলে ধরেন।
অন্যদিকে পত্রিকার দাম বাড়ায় ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কমেছে পাঠকের সংখ্যা। এ অবস্থায় ব্যয় সংকোচনের উপায় খুঁজছে সংবাদপত্র মালিকরা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল বছরের তুলনায় চলতি বছর টনপ্রতি নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৫৩ হাজার টাকা। কোথাও এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। অথচ গতবছর টনপ্রতি নিউজপ্রিন্ট বিক্রি হয়েছিল ৪৩ হাজার টাকায়। ধাপে ধাপে বেড়ে চলতি বছর জুনে নিউজপ্রিন্ট বিক্রি হয় ৫১ হাজার বা তার চেয়ে বেশি দামে। অর্থাৎ এক বছরে নিউজপ্রিন্টের টনপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলো, ভোরের কাগজ, যুগান্তর, সমকাল, আলোকিত বাংলাদেশ, নয়াদিগন্ত, ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, ডেইলি স্টারসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার দাম আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন হকার, পাঠক ও ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে চিটাগং সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইউসুফ আলী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পত্রিকার দাম বাড়ায় বিক্রি অন্তত ২ শতাংশ কমেছে এবং আগামী এক মাস পর আরও কমতে পারে। পাঠকের সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক কমেছে।
জানতে চাইলে টি কে পেপার মিলের প্রকল্প পরিচালক মো. রিয়াজুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নিউজপ্রিন্ট আগে আমদানি হয়ে আসত। প্রথম সারির পত্রিকাগুলো নিউজপ্রিন্ট বাইরে থেকে আমদানি করে এনে ছাপাত৷ অন্যান্য লোকাল যেসব পত্রিকা হাউজ রয়েছে এরাই মূলত লোকাল উৎপাদিত নিউজপ্রিন্ট ব্যবহার করে পত্রিকা ছাপায়। আজাদ পেপার, বসুন্ধরাসহ বেশ কয়েকটি মিল নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন করে। কিন্তু বর্তমানে কাঁচামাল সংকটের কারণে একদিকে বেড়েছে নিউজপ্রিন্টের দাম, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।
তিনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর দেশে স্কুল-কলেজ, অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছুই বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কোনো কাগজ রিসাইক্লিং হয়নি। করোনায় হাইজেনিক পেপার হিসেবে টিস্যু পেপারের বেশি চাহিদা ছিল। বর্তমানে লোকাল কাগজের স্বল্পতা আছে।
তিনি আরও বলেন, উৎপাদনে ব্যাঘাত, ট্রান্সপোর্ট খরচ, লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদনে ক্ষতি হচ্ছে৷ মূলত কাগজের আন্তর্জাতিক বাজারে যা দাম রয়েছে লোকাল দাম এখনও বেশি। লোকাল বাজারে কাঁচামালের সংকট থাকায় উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে মিল মালিকরা। যার প্রভাব পড়ছে সংবাদপত্রে।
এআইটি/আরবি