রোহিঙ্গারা ভাসানচর ছাড়ছে দলে দলে, দুই কারণে ‘স্টপেজ’ মিরসরাই

নোয়াখালীর ভাসানচর ক্যাম্প থেকে দলে দলে পালিয়ে আসছেন রোহিঙ্গা শরনার্থীরা। গত দুই মাসে শুধু মিরসরাইতেই ধরা পড়েছে রোহিঙ্গাদের চারটি গ্রুপ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত দুটি কারণে মিরসরাইকে রোহিঙ্গা পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে দালালরা। প্রথমত ভাসানচর থেকে সাগরপথে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব আনুমানিক ২০ কিলোমিটার। অর্থনৈতিক অঞ্চলের একাংশ এখনও জঙ্গল-ঝোপঝাড়ে ঘেরা। দূরত্ব ও জঙ্গল-ঝোপঝাড়ের কারণে দালালরা তাই মিরসরাইকে বেছে নিচ্ছেন বেশি।

অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে মহাসড়ক কাছে হওয়ার কারণেও এই রুটকে দালালরা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

জানা যায়, রোহিঙ্গারা নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে ট্রলারে করে মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় নামেন। সেখান থেকেই ছোটেন নিজ গন্তব্যে।

গত ৩০ মে থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত দালাল চক্রের মাধ্যমে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পালিয়ে আসেন ৬২ জন রোহিঙ্গা। রাতের আঁধারে সাগরপথে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে ভাসানচর ছাড়ে তারা। মিরসরাই পৌঁছানোর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এসব রোহিঙ্গা।

এরমধ্যে শনিবার (১৭ জুলাই) মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন এলাকায় ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ২০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এরআগে ১১ জুলাই ১৮ জন, ২২ জুন ১৪ জন ও ৩০ মে ৩ দালালসহ ১০ জন রোহিঙ্গাকে একই এলাকা থেকে আটক করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।

গত ২২ জুন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, উন্নত বাসস্থান ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সত্ত্বেও ভাসানচরে তাদের ভালো লাগছিল না। তাদের কারও বাবা-মা, কারও ভাইবোন, কারও ছেলে-মেয়ে উখিয়াতে রয়েছে। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়া ভাসানচরে থাকা তাদের জন্য ‘কষ্টকর’। তাই তারা দালালচক্রের মাধ্যমে কুতুপালং রওনা দেয়।

এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর হোসেন মামুন বলেন, দালালরা বিভিন্ন এলাকার। তাদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। আটক রোহিঙ্গারা দালালদের নাম বলতে পারছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে নোয়াখালী, কক্সবাজার, টেকনাফের দালালদের যোগসাজশে ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসছে তারা। এর পেছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা মূলত কুতুপালংয়ে থাকা তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যাওয়ার জন্য পালিয়ে আসে। ভাসানচর থেকে সবচাইতে সহজ রুট মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। মহাসড়কও কাছে। আমাদের টহল টিম সজাগ থাকায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভাসানচর থেকে সাগরপথে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই স্বল্প পথ ট্রলারে পাড়ি দেওয়া খুবই সহজ। আর এখানকার কিছু অংশ ঘন জঙ্গলে ঘেরা। দালালদের মাধ্যমে তাই গোপনে এখানে চলে আসা তারা।

এদিকে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, আমরা ২৪ ঘণ্টা পুরো এলাকা নজরদারিতে রাখছি। যেহেতু ভাসানচর উন্মুক্ত, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের চলাফেরায় বাধা দিতে পারি না। কেউ মাছ ধরার নাম করে, কেউ বাজার করার নামে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ

শনিবার (১৭ জুলাই) মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে আরও ২০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। এদিন সকাল সাড়ে ৫টায় ইছাখালী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের একটি আনসার ক্যাম্পের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানায়, নোয়াখালীর ভাসানচর রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছে তারা।

আটক রোহিঙ্গারা হলো- মো. আবদুর রহমান (২৭), সেতেরা বেগম (২০), মো. সাব্বির (২৬), সঞ্চিতা বেগম (২২), রাজিয়া বেগম (২৩), নুরুল করিমা (২০), ছালমা খাতুন (৫০), জামাল হোসেন (২৪), নুর কায়দা (২৫), রুমানা (৬), নুর ফাতেমা (৩), মো. আয়াজ (৮ মাস), জান্নাত আরা (৪), কিছমত আরা বেগম (২), মরিয়ম (৮ মাস), মো. আবুল কাশেম (৭), ওসমান গনি (৮ মাস), মো. আয়াত (৪), জান্নাত আরা (১) ও সেতারা (৫)।

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর হোসেন মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটক ২০ রোহিঙ্গার মধ্যে চার জন পুরুষ, পাঁচ জন মহিলা ও ১১ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে শিশু সাতজন ও ছেলে শিশু চারজন।

তিনি বলেন, আটকরা মায়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা)। তারা নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে ট্রলারে করে মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় নামে। সেখান থেকে তাদের টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা ছিল। পরে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকার দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা তাদের আটক করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেয়। সেখান থেকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

জেডএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!