রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারি বিরুদ্ধে ঢাকা কমলাপুর রেল স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী। হাতে শেকল বাঁধা ওই যুবক টিকিট কালোবাজারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদি গানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনও তিনি কমলাপুর রেল স্টেশনে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। গত ৭ জুলাই থেকে মহিউদ্দিন রনি নামে ওই শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন। মহিউদ্দিন রনির বাড়ি বরিশাল।
এ বিষয়ে মাহিউদ্দিন রনির সঙ্গে কথা হয় আলোকিত চট্টগ্রাম প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ই-টিকেটিং সিস্টেম সহজ ডটকমের মাধ্যমে ১৩ জুন আমি রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহীর সিট বুক করার চেষ্টা করি। কিন্ত বিকাশ থেকে ভেরিকেশন কোড দিয়ে আমার পিন কোড ছাড়াই টাকা কেটে নেওয়া হলেও আমাকে কোনো সিট দেওয়া হয়নি। এছাড়া আমাকে কোনো ডকুমেন্টসও দেওয়া হয়নি। ওইদিন আমি কমলাপুর রেলস্টেশনের রেলওয়ের সার্ভার অফিসে অভিযোগ করলে তারা সিস্টেম ফল্ট বলে জানান।
এ সময় তারা ১৫ দিনের মধ্যে কেটে নেওয়া টাকা ফেরত না পেলে আবার যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু এই সময় দেখি আমার চোখের সামনে আমার বুক করা ৬৮০ টাকার টিকিট কম্পিউটার অপারেটর ১ হাজার ২০০ টাকায় আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেন। বিষয়টি দেখার পর আমি ১৪ ও ১৫ জুন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে দুবার অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাইনি— বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ নেতা খুন—পদ হারালেন আওয়ামী লীগ নেতা
মহিউদ্দিন রনি বলেন, পরে আমি হাইকোর্টে রিট করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্ত আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে জানতে পারলাম এত বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রিট পরিচালনার খরচ সম্ভব নয়। শেষে নিজে একা লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিই। গত ৭ জুলাই থেকে আমি একা আন্দোলন চালিয়ে আসছি। শুরুতে রেলওয়ে পুলিশ বাঁধা দিলেও আমার সহপাঠীদের প্রতিরোধের মুখে তারা সরে আসেন। আমরা তাদের গোলাপ ফুল দিয়ে স্বাগত জানাই। আমি আমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। যতদিন আমার দাবিগুলো পূরণ না হবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর ও অবস্থান কর্মসূচি করেছেন মহিউদ্দিন রনি।
তাঁর দাবিগুলো হলো— সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা অথবা সহজকে বয়কট করতে হবে। টিকিট সিন্ডিকেট বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেনের জনসাধারণের জানমালের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি ও বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেনের সিট সংখ্যা বাড়ানো অথবা ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সঠিক সেবার মান ও তথ্যের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, অনেকেই বলেছেন এটা খুবই রিস্কি জায়গা। যেকোনো সময় মারা যেতে পারি। তবে আমি হাল ছাড়ার পাত্র নয়। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টোলারেন্স’ বাস্তবায়নে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমার সাথে কেউ যোগ না দিলেও আমি একা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে একা অবস্থান করছি। আপনারাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। সবাই মিলে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করবোই, ইনশাআল্লাহ— যোগ করেন তিনি।