রাতের আঁধারে সাগরে ছুড়ে ফেলা হলো যুবককে, ঘটনা চাপা দিতে মরিয়া ৩ ইউপি মেম্বার

বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর এলাকার আব্দুর সবুর (১৮) নামের এক যুবককে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নিয়ে খুন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই এ খুন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. বাবুল মাঝি। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে এক নারীকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। ১৫ বছর আগের সেই ঘটনার মামলায় এখনো আসামি তিনি।

এদিকে সবুরকে খুনের ঘটনা জানাজানি হলে খুনির পক্ষ নিয়ে ৩ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নিহতের বাবাকে ১ লাখ টাকা নগদ ও বাকি ১ লাখ চেকের মাধ্যমে প্রদান করা কথাও জানা গেছে।

টাকা লেনদেনের বিষয়টি সবাইকে বলে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) নিহতের মামাত ভাই মো. দিদার (২৫) ও বোন মর্জিয়া বেগমের (২৩) ওপর হামলা চালিয়েছে খুনি ও তার দল। আহতরা বর্তমানে বাঁশখালী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছে তিন মেম্বার। টাকা লেনদেনের বিষয়টি সবাইকে বলায় নিহতের মামাত ভাই মো. দিদার ও বোন মর্জিয়ার ওপর হামলা করে খুনির লোকজন। ওই হামলার পর লোমহর্ষক হত্যার ঘটনা উন্মোচিত হয়।

খুনি মো. বাবুল মাঝি একই গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে। ১৫ বছর আগে একইপাড়ার গৃহবধূ ছুরা খাতুনকে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন তিনি। ওই সময় নিহতের ছেলে মো. আলম বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেন। চলমান ওই হত্যা মামলার আসামি তিনি

প্রত্যক্ষদর্শী এবং মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিং বোটের জেলে আমির হামজা, আরমান ও সাদ্দাম বলেন, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাতে গভীর সাগরের লাশের দ্বারনামক স্থানে আগের ঘটনার রেশ টেনে হঠাৎ ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন বোটের মাঝি মো. বাবুল ও কর্মচারী আব্দুর সবুর। একপর্যায়ে রাতে শীতের মধ্যে আব্দুর সবুরকে জাল আটকে গেছে বলে সাগরের পানিতে নামায় বাবুল। এরপর তাকে উঠতে না দিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলেন তিনি। সবুরের মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফিশিং বোট ওই স্থান থেকে সরিয়ে নেয়। আমরা লাশটা বোটে তোলার আকুতি জানালে তিনি আমাদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মানুষ খুন করলে কোনো বিচার হয় না। চুপ থাক।

আরও পড়ুন : সাগরে ভেসে এলো অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ

পরেরদিন ৩১ ডিসেম্বর বাঁশখালীতে ফিরে আমরা সবুরের বাবা মো. ইব্রাহিমকে ঘটনা জানানোর আগেই বাবুল স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রভাবশালীদের নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন।

সালিশী বৈঠকে ছিলেন শীলকূপের ইউপি সদস্য সিদ্দিক আকবর বাহাদুর, ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন, ইউপি সদস্য মো. ইউছুফ ও বহদ্দার আব্দুর রশিদ। বৈঠকটি ৩১ ডিসেম্বর জালিয়াখালী নতুন বাজারের কালু সওদাগরের চায়ের দোকানে হয়।

ওই বাজারের ইজারাদার আবু তাহের এবং আওয়ামী লীগ নেতা আক্তার হোসেন বলেন, ওই বৈঠকের সময় আমরা তাদের পাশে বসা ছিলাম। হত্যার ঘটনা ২ লাখ টাকা দিয়ে সমাধান করে দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করা হয়। খুনির বিচার হওয়া উচিত।

নিহত আব্দুর সবুরের বাবা মো. ইব্রাহিম মাঝি বলেন, আমি ও আমার ছেলের বেতনও বকেয়া রয়েছে ৭০ হাজার টাকা। ওই ৭০ হাজার টাকা না দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ২ লাখ টাকায় হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাপ সৃষ্টি করছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করায় আমার ভাগিনা মো. দিদার ও ভাগ্নি মর্জিয়া বেগমকে পিটিয়ে আহত করেছে। খুনি ও প্রভাবশালীদের আতঙ্কে ছেলের মৃত্যুর ৮ দিনেও আমার কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারিনি।

সালিশী বৈঠকের আদেশদাতাদের একজন শীলকূপ ইউপি সদস্য সিদ্দিক আকবর বাহাদুর বলেন, আমি ওখানে চা খেতে গিয়েছিলাম। বৈঠকে ছিলাম না। অন্য দুই মেম্বার মো. নিজাম উদ্দিন ও মো. ইউছুপ ছিল।

তবে ওই দুই মেম্বারের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নিহতের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উজ্জ্বল/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!