ফিরোজশাহ কলোনির শাপলা আবাসিক এলাকায় পাঁচ গণ্ডার একটি জায়গা। এই জায়গার মাঝে টাঙানো হয়েছে একটি সাইনবোর্ড। যেখানে লেখা আছে— এই জায়গার মালিক সরোয়ার মোর্শেদ কচি ও আব্দুল ওয়াজেদ খান রাজীব।
প্রশ্নটা সাইনবোর্ড টাঙানো নিয়ে নয়। যে রাজীবের নাম সাইনবোর্ডে দেওয়া হয়েছে তিনি জায়গা কিনেছেন ৪ বছর বয়সে! মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কীভাবে জায়গা কিনতে পারেন— প্রশ্নটা সেখানে।
আলোকিত চট্টগ্রামের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এল আসল সত্যটা। রাতের আঁধারে শক্তি দেখিয়ে নিরীহ এক ব্যবসায়ীর জায়গাটা দখল করেছেন সরোয়ার মোর্শেদ কচি ও আব্দুল ওয়াজেদ খান রাজীবের বাহিনী। কচির খুঁটির জোর— তিনি ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর রাজীব— ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। এই শক্তিতেই শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে নুরুল আশরাফ নামের ওই হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীর জায়গাটি দখল করে নেন কচি-রাজীবের বাহিনী। যাতে ইন্ধন রয়েছে খোদ জায়গাটির কেয়ারটেকারের!
এদিকে এ ঘটনায় কচি-রাজীবসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নুরুল আশরাফ। অন্য তিন অভিযুক্ত হলেন— কেয়ারটেকার মো. রহমান (৪০), জমির উদ্দিন মাসুদ (৪২) ও কামাল পারভেজ (৪৫)।
আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে শ্রমিকের বড় বহর নিয়ে গাছ কাটার উৎসব পরীর পাহাড়ে, খোদ উকিলরাই
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ফিরোজশাহ কলোনির শাপলা আবাসিক এলাকায় পাঁচ গণ্ডার জায়গাটিতে কচি ও রাজীব মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড বসিয়ে দিয়েছেন। রাতের আঁধারে টাঙানো সেই সাইনবোর্ডে লেখা আছে— ‘এই জায়গার মালিক সরোয়ার মোর্শেদ কচি ও আব্দুল ওয়াজেদ খান রাজীব’।
অথচ গত ১৪ বছর ধরে জায়গাটিতে ভোগ-দখলে আছেন নুরুল আশরাফ। তবে কচির দাবি, তিনি ১৯৮৬ সালে জায়গাটি কিনেছেন। অথচ আকবরশাহ থানার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল ওয়াজেদ খান রাজীবের বয়স এখন প্রায় ৪০ বছর। সে অনুযায়ী ১৯৮৬ সালে তাঁর বয়স ছিল ৪ বছর। এখন প্রশ্ন হলো, ৪ বছর বয়সে তিনি কীভাবে রাজীবের সঙ্গে জায়গা কিনেছেন?
এদিকে সাইনবোর্ডটি রাতের আঁধারে লাগানো হয়েছে বলে আলোকিত চট্টগ্রামকে জানিয়েছেন নুরুল আশরাফ। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই জায়গাটি আমার দখলে আছে। এর নামজারিও আমার নামে। জায়গায়টিতে কাঁচাঘর ও বাউন্ডারি দেওয়াল নির্মাণ করে মাসিক বেতনের চুক্তিতে রহমানকে কেয়ারটেকার হিসেবে রাখি। কিন্তু শুক্রবার রাতে রহমানের যোগসাজশে কচি ও রাজীবের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী আমার সীমানার গাছ কেটে ঘর ভেঙে ফেলে। আমি সেদিন গ্রামের বাড়ি ছিলাম। পরদিন গিয়ে দেখি, আমার জায়গায় সাইনবোর্ড ঝুলছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করি।
আরও পড়ুন: দুদকের হানা—গণপূর্তের জায়গা দখল করে রেখেছে ডিসি অফিসের কর্মচারীরা!
তবে কচির দাবি জায়গাটি তাঁর। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি ১৯৮৬ সালে জায়গাটি কিনেছি। ২০০৮ সালে একই জায়গা উনি (আশরাফ) কিনেছেন। আমি আমার জায়গায় সাইনবোর্ড দিয়েছি। উনি অভিযোগ করার পর পুলিশও ঘটনাস্থল ঘুরে গেছে।
যোগাযোগ করা হলে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুপক্ষের সঙ্গেই আমরা কথা বলেছি। উভয়পক্ষ বসে এটা মিটমাট করে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
আলোকিত চট্টগ্রাম