রাইড শেয়ারিং—বেকারত্ব দূর হলেও ‘লজ্জায়’ পরিচয় থেকে যায় আড়ালে

রাইড শেয়ারিংয়ে আগ্রহী হচ্ছে দেশের শিক্ষিত যুবকের অনেকেই। সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরির আশায় বসে না থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে তারা নেমে পড়ছেন রাজপথে। তাদের কুইক সার্ভিসে সন্তুষ্ট চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

এদিকে বেকারত্ব দূর করতে রাইড শেয়ারিংয়ে নামা শিক্ষিত যু্বকদের বেশিরভাগই নিজেদের আড়াল রাখেন। এমনকি পরিবারও জানে না তাদের রাইড শেয়ারিং পেশায় যুক্ত হওয়ার কথা। মূলত এই পেশার প্রতি অবজ্ঞ-অবহেলায় নিজেদের পরিচয় গোপন রাখছেন শিক্ষিত যুবকরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বসে যাত্রীর অপেক্ষায় রাইডাররা। কেউ সামনে দিয়ে যেতেই জিজ্ঞেস করেন— ভাই, কোথায় যাবেন?

আরও পড়ুন: ঈদের আনন্দকে রঙিন করেছে বিনোদনকেন্দ্র

রাইডারদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত। পরিবারে বাড়তি আয়ের জন্য চাকরির পাশাপাশি তারা বেছে নিয়েছেন রাইড শেয়ারিং। তবে বেশিরভাগ রাইডার এই পেশাকে গোপন রাখেন। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক উচ্চশিক্ষিত এক রাইডার বলেন, আমি পরিবারের অজান্তে বাইক রাইডিং করে আয় করছি। কারণ এই পেশাটাকে অনেকে আড়চোখে দেখে এবং অবজ্ঞা করে।

তবে পরিবার ও সমাজে মূল্যায়ন হোক বা না হোক থেমে নেই জীবনযুদ্ধ। চাকরির আশায় বসে না থেকে স্বল্প পুঁজি দিয়ে জীবিকা অর্জনের জন্য দুই চাকার মোটরসাইকেল নিয়ে অসংখ্য যুবক নেমে পড়েছেন রাজপথে। ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর আশায় চলেছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাইডারদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষিত বেকার। তার মধ্যে আছে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া গরিব শিক্ষার্থীও। তাদের রাইডে চেপেই দ্রুত সময়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন সরকারি-বেসরকারি অফিসের চাকরিজীবিসহ নানা পেশাজীবী।

আরাফাত নামের এক রাইডার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে মানুষ রাইড শেয়ারিং করে জীবিকা নির্বাহ করে। অথচ আমাদের দেশের মানুষ এই পেশাটাকে ছোট করে দেখে। অনেকে বলে রাইডার আর রিকশা চালানো একই পেশা। প্রথমদিকে এসব শুনতে খুব খারাপ লাগত। কিন্তু এখন অনেকটা সয়ে গেছে।

তরুণদের পাশাপাশি ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকেও দেখা গেল রাইড শেয়ারিংয়ে। ওনার নাম আমজাদ হোসেন। ছেলে অফিস থেকে ফেরার পর মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। উদ্দেশ্য একটাই— পরিবারের জন্য কিছু বাড়তি আয় করা।

আরও পড়ুন: পাওনা টাকা চাওয়ায় কুপিয়ে কেটে ফেলল যু্বকের আঙুল

চাকরির পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং করেন ইপিজেডে কর্মরত সামাদুল হামিদ। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অফিস শেষ করার পর আমি বাইক নিয়ে রাইড শেয়ারিং করি। এতে আমার পকেট খরচের টাকা জোগাড় হয়। কিন্তু আমাদের সমাজ এই পেশার সঙ্গে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক (অব.) সুনীল কান্তি জালদাস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা সাধারণত কয়েকটি পেশাকে কর্ম মনে করি। যেমন— শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, ডাক্তারি, নার্সিং, পুলিশ ইত্যাদি। আসলে কর্ম এসবে সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রতিটি পেশাই কর্ম এবং স্বীকৃত। আমাদের চিন্তা-চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা কিছু পেশা ছাড়া বাকি পেশাগুলোকে আড়চোখে দেখি। অথচ উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশাল একটা শ্রেণি রাইড শেয়ারিং করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা সবার সমান।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!