বেড়াতে গিয়ে—কক্সবাজারে ‘নেতার’ সঙ্গে মদ খেয়ে মারা গেল ছাত্রলীগ কর্মীও

দিনের বেশিরভাগ সময়ই ‘গুরু’ ছাত্রলীগ নেতা রাফসান ইরফানের সঙ্গে মায়ায় জড়িয়ে থাকতেন ‘শিষ্য’ ছাত্রলীগ কর্মী মুনতাসির পিয়ম। দুজনেরই বাসা একই এলাকায় হওয়ায় চলাফেরা—ঘোরাঘুরি, মিছিল—মিটিং, সামাজিক আয়োজন কোনোটিতেই শিষ্যকে ফেলে যেতেন না গুরু। সেই গুরু—শিষ্যের মৃত্যুটাও হলো মাত্র ১৭ ঘণ্টার ফারাকে।

কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে মদ খেয়ে মারা গেল ছাত্রলীগ কর্মী পিয়মও। এর আগে মদ খেয়ে মারা যান চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগ নেতা রাফসান ইরফান। এনিয়ে একই ঘটনায় মারা গেল এই গুরু—শিষ্য।

মারা যাওয়া ছাত্রলীগ কর্মী পিয়ম চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার এনায়েতবাজারের বাসিন্দা। তিনি নগরের একটি বেসরকারি টেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র।

আরও পড়ুন: বেড়াতে গিয়ে—কক্সবাজারে মদ খেয়ে চট্টগ্রামের ‘ছাত্রলীগ নেতার’ মৃত্যু 

বেড়াতে গিয়ে মদ খেয়ে অসুস্থ অবস্থায় এদের দুজনকেই ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই রাফসান ইরফানের মৃত্যু হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয় ছাত্রলীগ কর্মী মুনতাসির পিয়মকে। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুনতাসির পিয়ম শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১টার দিকে মারা যান।

এর আগে সকালে মারা যান চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা রাফসান ইরফান। মাত্র ২৭ বছর বয়সী এই তরুণ কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন ১৫ সেপ্টেম্বর। এদিকে মেধাবী এই দুই তরুণের হঠাৎ মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগ নেতা রাফসান ইরফান কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে যান। তারা কক্সবাজারের বে ওয়ান্ডারস নামে একটি হোটেলে উঠেন।

কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়ান্ডারসের ম্যানেজার এম মান্নান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর হোটেলের ৬০২ নম্বর রুমে উঠেন রাফসান ইরফান। বুকিংয়ে তাঁর নাম থাকলেও হোটেল রেজিস্ট্রারের দেখা যায়—যে রুমে তাঁরা ছিলেন, এরমধ্যে রাফসানের নাম নেই। এখানে যারা ছিল তাদের নাম লেখা হয় এমডি পিয়াম ও রায়হান। অসুস্থ অবস্থায় রায়হানকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রায়হানের বাড়ি চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি এলাকায় বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, রাফসান ইরফানের সঙ্গে বে ওয়ান্ডারস হোটেলের অ্যাকাউন্ট হেড কায়সার আহমেদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। মূলত কায়সারের রেফারেন্সেই ১৫ সেপ্টেম্বর ওই হোটেলে ওঠেন রাফসান। ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় মদপানে হঠাৎ দুই বন্ধুসহ রাফসান অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখভাল করেন কায়সার।

১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার পর কক্সবাজার বে ওয়ান্ডারস হোটেলের ৬০২ নম্বর রুমেই তাদের অতিরিক্ত বুক ব্যথা ও বমি হয়। ওইসময় লেবুর রস ও তেঁতুল খেলে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করেন তারা। এরপর ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু পরদিন ভোরে আবারও বুকে ব্যথা বেশি অনুভব করলে তাদের কক্সবাজারের বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় সেখান থেকে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ হোটেলে অসুস্থ হওয়ার পর রাফসান ও পিয়মের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে এসে কলাতলীর বে ওয়ান্ডারস হোটেলে উঠেন রাফসান ইরফান, রায়হান, সাইমুন পিয়ামসহ ৪ বন্ধু। মৃত্যুর ঘটনার পর পুলিশ হোটেলের ৬০২ নম্বর রুমে বমির চিহ্ন দেখতে পান এবং ঘটনাস্থলে একটি মদের বোতল পড়ে থাকতে দেখেন।

সূত্র জানায়, রাফসান ইরফান দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তার বাড়ি চটগ্রামের কোতোয়ালী থানার এনায়েনবাজার বাটালি রোডে। তিনি কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। শুরুতেই তিনি ছাত্রলীগের রিমন গ্রুপের রাজনীতি করতেন। পরে তিনি রাজীব দত্ত রিংকু গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। রাফসান ইরফানের বিশ্বস্ত কর্মী ছিলেন মুনতাসির পিয়ম।

এদিকে মদ পানে মৃত্যুর বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেন রাফসান ইরফানের পরিবার, বন্ধু—বান্ধব, তার ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মী ও স্বজনরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ প্রচার করে—সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন রাফসান ইরফান। আবার কেউ কেউ প্রচার করেন— স্ট্রোকে মারা গেছেন এই ছাত্রলীগ নেতা। মদ পানে মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা হুমকিও দেওয়া হয় দৈনিক আলোকিত চট্টগ্রামের প্রতিবেদককে।

আরও পড়ুন: ‘বিব্রত নেতারা’—ইয়াবাকাণ্ডে জড়িয়ে পদ হারালেন সেই ছাত্রলীগ নেতা

রাফসান ইরফানের মৃত্যু নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ চৌধুরী সাদিত নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেন—চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রাফসান চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন। অথচ সড়ক দুর্ঘটনার কোনো চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি আলোকিত চট্টগ্রামের অনুসন্ধানে।

দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগের নেতার ছেলের এমন পোস্টে বিব্রত হওয়ার কথাও বলেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী।

এক ছাত্রলীগ নেতা এ ধরনের পোস্টকে বিব্রতকর মন্তব্য করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নেতার পুত্র সাদিত বান্দরবান পাহাড়ে থেকে ঘুমের মধ্যেই হয়ত চট্টগ্রাম—কক্সবাজার মহাসড়কের মাঝপথে চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার স্বপ্ন দেখেছেন!

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!