মামলা—হামলা, এরপর অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকেও নিয়ে গেলেন পুলিশ শ্বশুর

অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে আটকে রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থলোভী শ্বশুরের হুমকি-হয়রানি ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নিরীহ এক ব্যবসায়ী।

শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জয় কুমার সুশীল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি টিআইএন সার্টিফিকেট ও ট্রেড লাইসেন্সধারী একজন ব্যবসায়ী। আমার শ্বশুর শুভেন্দু সরকার পুলিশের কনস্টেবল। তিনি আমার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে আটকে রেখে ক্রমাগত হুমকি ও নানাভাবে হয়রানি করছেন। তাঁর নির্দেশে পুলিশি নির্যাতনে আজ আমি শারীরিক, মানসিক এবং পারিবারিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত।

জয় কুমার সুশীল বলেন, গত বছরের ১০ আগস্ট শুভেন্দু সরকারের মেয়ে জ্যোতির্ময়ী সরকারের (২১) সঙ্গে সনাতন ধর্ম অনুযায়ী বিয়ে হয়। নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে হলফনামাও সম্পাদিত হয়।

আরও পড়ুন: পূজামণ্ডপে হামলা : ৮৩ জনের নামে মামলা, অজ্ঞাত ৫০০

বিয়ের কিছুদিন পর আমার শ্বশুরের চাকরির বদলির আদেশ হয়। তিনি পুনরায় কর্মস্থলে থাকার জন্য আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চান। আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। এ নিয়ে আমার স্ত্রী গত ২৫ জানুয়াারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর এবং ১ ফেব্রুয়ারি আইজিপি পুলিশ হেড কোয়ার্টার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তার বাবার বিরুদ্ধে।

গত ১৩ এপ্রিল আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে স্বাক্ষ্য দিতে পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তখন করোনা পরিস্থিতির জন্য লকডাউন থাকায় আমরা ১ মে সময়ের আবেদন করি। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল আমার শ্বশুর আমাকে পুলিশ দিয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে বিনা সাক্ষ্য এবং মতামত ছাড়া আমার স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।’

তিনি আরও বলেন, একটি চেকের মামলায় গত ২৪ এপ্রিল রাত ৩টায় রায়ের পরোয়ানা নিয়ে একদল পুলিশ আমার ফতেয়াবাদের বাসায় হাজির হয়। কোনো কিছু বোঝার আগেই আমার শ্বশুর ও তাঁর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সনজিত নাথ ও কৃষ্ণপদ দাশ জোর করে আমার স্ত্রী জ্যোতির্ময়ী সরকারকে মাইক্রোবাসে তুলে ফেলেন।

অপরদিকে অন্য একটি মাইক্রোবাসে আমাকে তুলে চন্দনাইশ থানায় নিয়ে যায়। ভোর ৫ টায় থানার সামনে গাডি থেকে নামানো হয়। পরে নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করার পর এসআই নিমাই পাল লাঠি দিয়ে আমাকে পিটানো শুরু করেন। এরপর এসআই নিতেন আঘাত করে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। মারধর করে আমাকে রক্তাক্ত করা হয়। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

পরদিন সকাল ৬ টায় যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পুরো ঘটনা ডাক্তারকে খুলে বললেও প্রেসক্রিপসনে ‘এক্সিডেন্টাল ইনজুরি’ লিখে আমাকে রিলিজ দেওয়া হয়। এরপর কোর্টে আনার সময় রক্তক্ষরণ বেড়ে গেলে সাব ইন্সপেক্টর ছোটন বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের মেইন গেইট সংলগ্ন নোঙর রেস্টুরেন্টের সামনে অটোরিকশা থামিয়ে একটি পানির বোতল ও দুইটি নাপা ট্যাবলেট খেতে দেন। তিনি পানি দিয়ে শার্ট ও মুখের রক্ত পরিষ্কার করেন । এরপর সকাল আটটায় আমাকে কোর্টে চালান করা হয়।

আরও পড়ুন: ‘কাঁদছে হিন্দুরা’ চট্টগ্রাম—সিলেট থেকে কুমিল্লা—কুড়িগ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা

২৫ এপ্রিল আমার বাবা সত্যরঞ্জন সুশীল ও স্বজনরা হাটহাজারী থানায় আমি ও আমার স্ত্রীর খোঁজে থানায় গেলে অভিযোগ না নিয়ে তাদের থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমার মা-বাবা পুলিশ কমিশনার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) এবং সার্কেল এসপি (পটিয়া) বরাবরে সাহায্য প্রার্থনা করে আবেদন করেন। এছাড়া চট্টগ্রামের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-১৮৩/২১) করা হয়।

পরে ২৭ এপ্রিল জেলে থাকা অবস্থায় আমার বিরুদ্ধে শ্বশুর তার মেয়ে জ্যোতির্ময়ী সরকারকে চাপে ফেলে হাটহাজারী থানায় নারী শিশু আইনে মিথ্যা মামলা করেন। এ মামলায় তড়িঘড়ি করে চার্জশিটও দেওয়া হয়।

এদিকে আমি জেলে থাকা অবস্থায় আমার শ্বশুর বাকলিয়া থানার পুলিশ নিয়ে আমার বাবার বাসায় গিয়ে আসবাবপত্রদিসহ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তছনছ ও ভাঙচুর করে।

আমার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে শ্বশুর জোরপূর্বক আটকে রেখেছে। ওনার কারণে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি যোগযোগ বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় স্ত্রী ও গর্ভের সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উৎকণ্ঠিত।

তিনি অভিযোগ করেন, আমার শ্বশুরের হুমকি-ধমকি ও হয়রানিতে আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পুরো ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দোষীদের শাস্তি চাই। একইসঙ্গে ফেরত চাই আমার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!