‘মানবিক ডাক্তারের’ ফেসবুক—ইমো হ্যাক করে চাঁদাবাজি, পুলিশ-র‌্যাবে গিয়েও ‘ফল শূন্য’

করোনাকালে শ্বাসকষ্টের রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দেন মানবিক ডাক্তার এম ওয়াই এফ পারভেজ। বিনামূল্যে ঘরে ঘরে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া, হাসপাতালের ব্যবস্থা করে দেওয়াসহ করোনা মহামারীতে এভাবেই নিজেকে রোগীর সেবায় নিবেদিত করেন এ চিকিৎসক।

সেইভ আওয়ার সোসাইটি (এসওএস) নামের একটি মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার ডা. পারভেজ। এ সংগঠনটি গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং সহায়তার হাত বাড়ায়। সেবা দিতে গিয়ে সপরিবারে করোনা আক্রান্তও হন মানবিক ডা. পারভেজ। অথচ এ চিকিৎসককেই বিপদে ফেলার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে অসাধু এক চক্র।

চক্রটি ডা. পারভেজের ফেসবুক ও ইমো আইডি হ্যাক করে বিভিন্ন মানুষের কাছে নানা ধরনের বার্তা পাঠায়। কাউকে চাঁদা চেয়ে বার্তা পাঠায়, তো কাউকে দেয় অশ্লীল ম্যাসেজ। এ নিয়ে দুবছর ধরে ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন এ চিকিৎসক। আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়ে থানায় ও র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দিলেও ফলাফল শূন্য। ফলে চরম অনিশ্চয়তার দিন কাটছে পাঁচলাইশ ডক্টরস হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. পারভেজের।

আরও পড়ুন: ‘মানবিক হাসপাতালের’ যাত্রা শুরু, ফোন করলেই বাসায় যাবে ডাক্তার

জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের আমান বাজারের মানবিক চিকিৎসক ডা. এম ওয়াই এফ পারভেজের ফেসবুক ও ইমো আইডি হ্যাক করে রোগী ও স্বজনদের কাছে আপত্তিকর ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে চাঁদাবাজি করছে হ্যাকাররা। গতবছরের ৪ এপ্রিল হঠাৎ তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আইডিটি হ্যাক হয়। হ্যাকার সেই আইডি থেকে রোগী ও স্বজনদের কাছে চাঁদা দাবি করে। একইসঙ্গে পাঠাতে থাকে অশ্লীল ক্ষুদে বার্তাও।

এভাবে চক্রটি অনেকের কাছ থেকে মোট অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নারী রোগী ও স্বজনদের কাছে অশ্লীল ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে থাকে। এতে চরম মানসিক অস্থিরতায় পড়েন ডা. পারেভেজ। পরে তিনি ১৫ এপ্রিল হাটহাজারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অভিযোগ নিয়েই দায় সেরেছে হাটহাজারী থানা। এক বছরেও কোনো কিছুই করতে পারেনি থানা পুলিশ। মাঝখানে হ্যাকারের যন্ত্রণা কিছুটা কমলেও কোনো শাস্তির মুখোমুখি না হওয়ায় ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হ্যাকাররা।

জানা যায়, চলতি বছরের মাঝামাঝি ফেসবুকের সঙ্গে ইমো আইডিও হ্যাক করে রোগী ও স্বজনদের থেকে চাঁদা দাবি করা হয়। একইসঙ্গে পাঠানো হয় অশ্লীল ক্ষুদে বার্তা। এসময় তিনি উপায় না দেখে ১৩ জুলাই র‌্যাব-৭ হাটহাজারী ক্যাম্প ও হাটহাজারী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য এসআই প্রদীপ লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় অভিযোগ নিতে পারবেন না বলে জানান। পরে ডা. এম ওয়াই এফ পারভেজের পরিচিত এক ওসির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার পর তিনি অভিযোগ নেন। তবে শুধু অভিযোগ নিয়েই দায় সেরেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ।

আরও পড়ুন: ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘বেফাঁস মন্তব্য’—সেই সাজ্জাত গ্রেপ্তার

জানতে চাইলে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ম্যজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছি। অনুমতি পেলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করব।

এ বিষয়ে জানতে র‌্যাব-৭’র মিডিয়া শাখায় কল করা হলেও কেউ রিসিভ করেননি।

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করেও অগ্রগতির কোনো খবর না পেয়ে হতাশ ডা. পারভেজ। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দীর্ঘ দুবছর ধরে আমি হ্যাকারের যন্ত্রণায় ভুগছি। দুবার থানায় ও একবার র‌্যাবে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। র‌্যাবের সঙ্গে ও থানায় যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যদি প্রতিকার না পাই তাহলে কোথায় যাব। আমি এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। হ্যাকারের যথাযথ আইনি শাস্তি চাই।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!