ভুল পিনে ‘রিসেট’—মিরসরাইয়ে উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারেনি ৭০ শতাংশ অভিভাবক

মিরসরাইয়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তুলতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অপারেটর এবং পিনকোড পরিবর্তনের কারণে এই ভোগান্তি— বলছেন ভুক্তভোগীরা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, পিন নম্বর ভুলে যাওয়া এবং কয়েকবার ভুল পিন ব্যবহার করার কারণে রিসেট হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় নগদের গ্রাহক সেবা অফিস না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির সেলস ডিস্ট্রিবিউশন হাউজে ভিড় করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী সরকারি উপবৃত্তির টাকা পান। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিন পৌর সদরে অবস্থিত নগদ সেলস ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসেছেন অভিযোগ জানাতে। সেখানে কর্মরত দুজন সেবা দিচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর অনেক অভিভাবক সমস্যার সমাধান করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা গত সপ্তাহ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মোবাইল নম্বরে আসতে শুরু করে। বর্তমানে নগদের মাধ্যমে এ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে রুপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে বিতরণ করা হতো। মোবাইল নম্বরে মেসেজ আসার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপজেলার বিভিন্ন বাজারের নগদ এজেন্টের দোকানে ভিড় করেন। কিন্তু পিন নম্বর ভুলের কারণে অনেকেই টাকা তুলতে পারছেন না।

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, অধিকাংশ অভিভাবক শুধু উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার কারণে পিন নম্বর ভুলে যাচ্ছেন। কয়েকবার ভুল পিন দেওয়াতে পিন রিসেট হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে করোনা

উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন জানান, তার মেয়ে নাহিদা আক্তার দক্ষিণ আমবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার উপবৃত্তির টাকা উঠাতে নগদ এজেন্টে গেলে পিন ভুল হওয়ার মেসেজ আসে। উপজেলায় নগদের অফিসে দুদিন আসার পরও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।

খৈইয়াছড়া গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে ফারিয়া বিন হাসনাত মসজিদিয়া ভূঁইয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মোবাইলে উপবৃত্তির টাকার মেসেজ আসলেও পিন সমস্যার কারণে টাকা তুলতে পারছি না। নগদ অফিসে গিয়েও প্রতিকার পাইনি।

তিনি আরও বলেন, টাকা উত্তোলনের জন্য গোপন পিন দিলে ‘ডিড নট ম্যাচ’ পিনটি সঠিক নয় বলছে। আগের গোপন পিন কোডটি অটোতেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন গোপন পিন সেট করতে চাইলে তাও হচ্ছে না। নগদের গ্রাহক সেবা ১৬১৬৭ নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় নগদের মিরসরাই সেলস ডিস্ট্রিবিউটর দায়িত্বে থাকা হাক্কানী লজিস্ট্রিকের জেনারেল ম্যানেজার ইরফান মিয়ার সঙ্গে। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গ্রাহকরা দীর্ঘদিন নগদে লেনদেন না করাতে পিন নম্বর ভুলে গেছেন। কয়েকবার পিন দিলে তা রিসেট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মিরসরাইয়ে নগদের কোনো কাস্টমার কেয়ার নেই। সদরে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান আছে। আরও দুটি স্থাপনের কাজ চলছে। প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর অভিযোগের সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলার মধ্য তালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন, উপজেলায় ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ অভিভাবক পিন নম্বর ভুলে যাওয়াতে এ সমস্যা সৃষ্টি দিয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী টাকা তুলতে পারেনি তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে শঙ্কাপ্রকাশ করেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, উপজেলায় প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পান। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবক টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকের সমস্যার সমাধান হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে তাদের মোবাইল নম্বর জমা দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে। পরে নম্বরগুলো অধিদপ্তরে মেইল করলে আশা করি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, গত ১৪ জুন থেকে মোবাইলে টাকার মেসেজ আসা শুরু হয়েছে। টাকা আসার ১৫ দিনের মধ্যে টাকা উত্তোলন না করলে তা পুনরায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই দ্রুত সমস্যার সমাধান করা উচিত।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!