ভিড়ল শততম জাহাজ—বাড়ল গভীর সমুদ্রবন্দরে রাজস্ব স্বপ্নের গভীরতা

মাতারবাড়ি জেটিতে

চট্টগ্রাম বন্দরের উপবিভাগ হিসেবে পরিচালিত মাতারবাড়ি জেটিতে ১০০তম জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের মাইলফলক নিয়ে ভিড়েছে ‘এমভি হোসেই ফরচুন’। এ জেটিতে প্রথম বার্থিং করা জাহাজ ছিল পানামা পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’।

বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে জাহাজটি বার্থিংয়ের জন্য এ জেটিতে ভিড়ে।

জানা যায়, মাতারবাড়ি জেটিতে তেল ও কয়লা পরিবহনের জন্য নির্মাণ করা হয় পৃথক দুটি জেটি। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আনতে ২০১৫ সালের আগস্টে জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে তৈরি করা হয় ৩৫০ মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীর ও ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল।

আরও পড়ুন: মামলাজটে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে গেছে ২ বিদেশি জাহাজ

২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৭৩৬ টন যন্ত্রপাতি নিয়ে ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ নামে প্রথম জাহাজ ভিড়েছিল সেখানে। এরপর ২০২১ সালের ১৫ জুলাই সিঙ্গাপুর থেকে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা জাহাজ দ্বিতীয় জেটিতে প্রথমবারের মতো বার্থিং করা হয়।

শততম জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের মাইলফলক নিয়ে ‘এমভি হোসেই ফরচুন’ মাতারবাড়ি জেটিতে আসার আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) যৌথ প্রচেষ্টায় জেটিতে ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে। এসব জাহাজে আসা প্রায় ১১ লাখ ১০ হাজার মালামাল খালাসের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কোষাগারে রাজস্ব জমা হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা। তবে এখনও পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের কাজে এই জেটি ব্যবহার হয়ে আসছে। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ বার্থিংয়ের কাজ শুরু হলে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ আরও বহুগুণ বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

প্রথমদিকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল আমদানির জন্য কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে জেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে চ্যানেলের গভীরতার কারণে জেটিতে সরাসরি জাহাজ ভিড়তে না পারায় পরে সেখানে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ শেষ হলে টার্মিনালে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে এই গভীর সমুদ্রবন্দরে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ৯ দশমিক ৫ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে না।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মাতারবাড়ি জেটিতে যত জাহাজ এসেছে সবগুলো প্রকল্পের মালামাল নিয়ে। এমভি হোসেই ফরচুন জাহাজটিও আসল মালামাল নিয়ে। তবে এখনও বাণিজ্যিকভাবে জাহাজে মালামাল আনা-নেওয়া শুরু হয়নি। তবে জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণে আসছে-যাচ্ছে এবং বন্দরের পাইলটরা আনা-নেওয়া করছে।

আরও পড়ুন: রাত হলেই বঙ্গোপসাগরের জাহাজের তেলে চোরের হাত, সক্রিয় হারুন—আশিক সিন্ডিকেট

তিনি বলেন, মাতারবাড়ির কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য টেন্ডারও করা হয়েছে। আশা করছি ২০২৪ বা ২০২৫ সালের মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দরের একটা সম্পূর্ণ আকৃতি চলে আসবে এবং কাজও শুরু করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। যেখানে ৮ হাজার টিইইউএস পর্যন্ত কনটেইনার নিয়ে আসতে পারবে জাহাজগুলো। এটা আমাদের সাব ডিভিশন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশ ছাড়াও পাশের দেশ মিয়ানমার, নেপাল, চীন, ভারতসহ প্রায় সব দেশই ব্যবহার করতে পারবে। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।

জেএন/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!