বীর বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের দিন। প্রায় ৯ মাস বিভীষিকাময় সময়ের পরিসমাপ্তির দিন। লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তস্রোত, স্বামী-সন্তানহারা নারীর অশ্রুধারা, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা আর বীরাঙ্গনাদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল মহান এই বিজয়। ৫০ বছর আগে এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের ঠিকানা।

বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নতমস্তকে আত্মসমপর্ণ করেছিল বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি।

আরও পড়ুন: প্রদীপ জ্বালিয়ে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করল সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম

হাজার বছরেরও বেশি সময়ের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে সীমাহীন ত্যাগ আর ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেদিন অর্জিত হয়েছিল বাঙালির বিজয়। ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরা মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর পক্ষে পাকিস্তানি বাহিনীর সেই আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন।

স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জন আমাদের এনে দিয়েছে একটি সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। তাই আজ চারদিকে উৎসবের আনন্দ। মুখে মুখে জয়বাংলা গান। হাতে হাতে প্রিয় লাল-সবুজের পতাকা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। ছবি-বাচ্চু বড়ুয়া

একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পরাজয় মেনে নিয়ে মাথা নত করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্র সমর্পণ করেছিল বাঙালির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।

আনন্দের পাশাপাশি জাতি বিজয়ের এ দিনে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন।

আরও পড়ুন: বোধনের আবৃত্তিসন্ধ্যা—আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের চেতনা

মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রধানমন্ত্রী এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে আরও একবার স্বাধীনতার স্থপতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।

এর আগ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: মুক্ত হলো রাঙ্গুনিয়া—ক্যাম্প ছেড়ে পালাল পাকিস্তানি সৈন্যরা, বাড়িঘরে দিল আগুন

চট্টগ্রামে সকাল থেকে কেসিদে রোডস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার নিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় একাত্তরের মহান বীর শহীদদের।

বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!