‘বিষমুক্ত’ শুঁটকির মাচা আনোয়ারার উপকূলজুড়ে

চাটাই, প্লাস্টিক বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে ছোট ছোট নানা রকমের মাছ। বাতাসের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ঝেড়ে নেওয়া শুকনো চিংড়ি শুটকিগুলো থেকে আলাদা করা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা।

পাশেই বাঁশ দিয়ে মাচায় শুকানো হচ্ছে ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা মাছসহ হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ। এর মধ্যে ড্রাম, লাই, বস্তায় ভরে ট্রাকে করে বিভিন্ন শুঁটকি নেওয়া হচ্ছিল আশপাশের হাটবাজারসহ বিভিন্ন জেলায়। এমন ব্যস্ততা আনোয়ারার শুঁটকি পল্লীতে।

জানা গেছে, ইলিশের জোয়ার-ভাটার পর মাছের সুদিন-দুর্দিন পেরিয়ে চট্টগ্রামের উপকূলে এখন জমজমাট শুঁটকিপল্লী। তরতাজা ইলিশ মাছের স্বাদ নেওয়া শেষে উপকূলজুড়ে চলছে এখন মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরির ধুম। তাই পরিবার নিয়ে জেলেরা এখন ব্যস্ত রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা, চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছের শুঁটকি তৈরিতে।

জেলেরা জানান, কম দামে দারুণ স্বাদের শুঁটকি কিনতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তসহ চট্টগ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী, আড়তদার এবং খুচরা ক্রেতারা ভিড় করছেন সমুদ্র উপকূলে।
জেলেরা মনে করেন, সরকারি পর্যবেক্ষণ ও অনুদানের মাধ্যমে যদি এই শিল্পের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া হয় তাহলে এটি অনেকদূর এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।

শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত মো. ইসমাঈল বলেন, মসজিদ কমিটি থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে এখানে প্লট ভাগ করে ত্রিপল-প্লাস্টিক দিয়ে চিংড়ি মাছ শুকানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরপর জেলেদের কাছ থেকে চিংড়ি মাছ কিনে ত্রিপলে শুঁকিয়ে শুটকি তৈরি করি। এই বাচা মাঝির ঘাট ২-৩ হাজার মানুষ এ কাজে নিয়োজিত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্লটে আছে ৩০-৩৫ জন। এই শুঁটকি একদিনেই তৈরি হয়ে যায়। প্রতিকেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। ১০-১১ দিন পরপর ত্রিপলসহ সবকিছু পরিবর্তন করে আবার নতুন করে জায়গা তৈরি করি। এরকম এক ডালায় শ্রমিকের মজুরি, মাছের দাম, জিনিসপত্র সবমিলিয়ে লাখ টাকার ওপর খরচ হয়। বিক্রি করে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভও হয়। এভাবে শীত মৌসুমে ৩-৪ মাস পর্যন্ত এই শুঁটকি তৈরি চলে।

বিভিন্ন বড় মাছের শুঁটকি তৈরির কাজে কর্মরত আবুল কালাম বলেন, এসব শুঁটকি তৈরি করতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। একবার শুঁটকি তৈরি করতে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বিক্রি করে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার শুঁটকি বিক্রি হয় চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার আড়তগুলোতে। কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত এসব শুঁটকির চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

গহিরা উপকূলের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল নবী বলেন, আমরা সমুদ্র থেকে আনা মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে দেড় হাজার থেকে দুহাজার টাকায় বিক্রি করি। তারা এসব মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। আমি ছাড়াও এখনকার অনেক মাছ ব্যবসায়ী শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে মাছ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার উপকূলে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত বছর ৩০ টন শুঁটকি উৎপাদন করা হলেও এবার উৎপাদন বেড়ে ৫০ টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডিডিটি পাউডার বা কীটনাশকের অপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!