চট্টগ্রামে ‘কারসাজি’—হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

বাজার নিয়ন্ত্রণে চাক্তাই—খাতুনগঞ্জ সিন্ডিকেট

সয়াবিন তেলের ভোগান্তির সঙ্গে এবার ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আট দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। প্রতিদিনই কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে বাড়ছে দাম। পাইকারিতে দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।

সরেজমিন খাতুনগঞ্জে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন আড়তে রয়েছে পেঁয়াজের স্তূপ। বিভিন্ন স্থান থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসা ট্রাকগুলো লাইন ধরে দাঁড়ানো। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৩৭-৩৮ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩০- ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ট্রলারেই পচছে টনে টনে পেঁয়াজ—আধুনিক সুবিধার অভাব, নাকি বাড়তি টাকার লোভ

এদিকে নগরের কাজির দেউড়ি, রিয়াজুদ্দিন বাজার, কর্ণফুলী মার্কেট, পাহাড়তলী বাজার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং দেশি পেয়াঁজ ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জে আগে যেখানে দিনে ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ আসত বর্তমানে আসছে মাত্র ১৮ থেকে ২০টি। বন্দরের কাছের গুদামে মজুদ থাকা পেঁয়াজগুলোই এখন বাজারে আসছে। তবে শিগগির পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না পেলে দাম আরও বাড়তে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসলেও তেমন কদর নেই। ভারতীয় পেঁয়াজের কদর বেশি। তাই আমদানি বন্ধ থাকায় দামও প্রতিদিন বাড়ছে।

যোগাযোগ করা হলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আইপির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। এ কারণে দেশে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়েছে। তবে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসলেও কদর কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) মেয়াদ ছিল চলতি মাসের ৫ মে পর্যন্ত। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ছয়দিন দেশের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। সরকার নতুন করে আমদানির অনুমোদন না দেওয়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। আর এ সুযোগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আগের কেনা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০-১২ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন।

আরও পড়ুন: চাক্তাইয়ের দুই ভোগ্যপণ্যের ফ্যাক্টরিতে তালা ঝুলিয়ে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট

এদিকে পেঁয়াজের সংকট কাটাতে মিয়ানমার থেকে আমদানির চিন্তাভাবনা চলছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সবগুলো আগের কেনা। কতিপয় ব্যবসায়ীরা কখনো তেল, কখনো পেঁয়াজ, রসুন কিংবা অন্যান্য পণ্য নিয়ে খেলছেন। ভোক্তাদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরকারও শক্ত হাতে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না। ফলে এসবের মাসুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। যেখানে অনিয়ম সেখানেই জরিমানা করা হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে। নির্দিষ্ট দামের বাইরে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!