বসন্ত বাতাসে ভালোবাসায় ভাসছে ফুলের দোকান

মরা ডালপালায় ফুটেছে লাল কৃষ্ণচূড়া, গাছের উঁচু ডালে মনের সুখে কোকিলের কুহু কুহু ডাক জানান দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে। সেইসঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) পালন করা হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

ভালোবাসা দিবস আর বসন্ত মানেই যেন নতুন এক আবহ, বিশেষ অনুষঙ্গ ও রঙবেরঙের ফুল। ফুল ভালোবাসার প্রতীক। প্রিয় মানুষকে ফুল উপহার দিতে কে না ভালোবাসে! আর তা যদি হয় বিশেষ কোনো দিনে তাহলে তো আর কথায় নেই। বসন্ত-ভালোবাসা দিবসে বেড়েছে ফুলের চাহিদা। সেই চাহিদার উত্তাপ এখন বাজারে, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ফুল। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ফুলের রানী গোলাপের।

এদিকে সারাবছর ফুল বিক্রি হলেও বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস যেন বিক্রেতাদের কাছে বিশেষ এক দিন। অর্থাৎ এই দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়৷ এসময় ফুল কিনতে ভিড় জমায় তরুণ-তরুণীরা৷

নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার দুপাশ যেন সবসময় ফুলের স্বর্গরাজ্য হয়ে থাকে। সারাবছর ব্যাপক ফুল বিক্রি হলেও ভালোবাসা দিবসের মতো বিশেষ দিনে এসব দোকানে ফুল বিক্রি হয় প্রায় দ্বিগুণ। বসন্ত-ভালোবাসা দিবসে এখানকার দোকানগুলো ভরে উঠেছে দেশি–বিদেশি ফুলের সমারোহে৷

আরও পড়ুন: বসন্ত বাতাসে সূর্যমুখীর মুগ্ধতা—প্রথম আবাদেই লাভের আশা

সরেজমিনে দেখা গেছে, চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। অধিকাংশ ফুলের দোকানে এখন বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের ভিড়। সবচেয়ে বেশি ভিড় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের৷ তবে ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদাই যেন বেশি, বিক্রিও জমে উঠেছে। এছাড়া দোকানগুলোতে ফুলের অর্ডার রয়েছে প্রচুর। সবমিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা।

কথা হয় চেরাগী মোড়ের একটি দোকানে ফুল কিনতে আসা চট্টগ্রাম হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহানের সঙ্গে। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ভালোবাসার জন্য আসলে আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। তবুও আমরা এ দিনটি বিশেষভাবে পালন করে থাকি। আমি আমার বাবা-মায়ের জন্য ফুল কিনতে আসলাম তাদের সারপ্রাইজ দেবো বলে।

অভিন্ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থী ইশফাক তাহসান বলেন, ভালোবাসার মানুষকে বিশেষ এই দিনে উপহার দিতে গোলাপ ফুল কিনতে এসেছি। প্রতিটি মানুষের জীবনে ভালোবাসা, মান-অভিমান আছে, থাকবে। সকলের জীবনে ভালোবাসা যত্নে বেঁচে থাকুক।

এদিকে চাহিদা বাড়ায় আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে ফুলের দাম। দেশি-বিদেশি রঙ-বেরঙের ফুল বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে।

এ বিষয়ে অপরাজিতা পুষ্প বিতানের মালিক মো. তৌসিফ উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ফুল ভালোই বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে গোলাপের চাহিদা বেশি। দেশি গোলাপ একটি ৩০ টাকা, চাইনিজ ও থাই গোলাপ ১৫০ টাকা, ইন্ডিয়ান গোলাপ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ এছাড়া জারবেরা, জিপসি, লিমুসহ আরও অনেক ফুল রয়েছে এখানে।

অন্যদিকে দোকানিরা বলছেন, বাগান মালিকরা দাম বাড়ানোর কারণে তাদেরও বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে ফুল। প্লাস্টিক ফুলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফুল উৎপাদন আগের চেয়ে কমে গেছে। তবে দাম বাড়তি হলেও ফুলের কোনো সংকট নেই। বেচাবিক্রিও মোটামুটি ভালো হচ্ছে।

এ বিষয়ে নিউ স্টার পুষ্প বিতানের মালিক মো. আমান বলেন, শুধু বিশেষ দিন উপলক্ষে নয়, এমনিতে ফুলের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে একশটি গোলাপের দাম ছিল এক হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে পনেরশ থেকে ২ হাজার টাকা হয়েছে। তবে দেশি গোলাপের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

হেভেন্স ফ্লাওয়ার দোকানের মালিক সুমন বলেন, মঙ্গলবার ৬০০টি ফ্লাওয়ার বুকেট অর্ডার আছে। বই মেলা, বসন্ত, ভালোবাসা দিবস সবকিছুর সাথে ফুলের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা গোলাপ কিনে নিয়ে যাচ্ছে বেশি।

স্টার পুষ্প বিতানের মালিক মো. আবদুল মাবুদ বলেন, বিশেষ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে ফুলের বাগানিদের একটা লক্ষ্য থাকে সেজন্য ফুলের দাম কিছুটা বাড়তি। আমাদের দোকানে দেশি–বিদেশি ফুলের মধ্যে রয়েছে চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, আফ্রিকান ডেইজি, কসমস, সিলভিয়া, প্যানজি/পেনজি, ডায়ান্থাসপপি, সূর্যমুখী, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, গাঁদা, মর্নিং গ্লোরি।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এবারও ফুল বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্লাস্টিক ফুলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফুল উৎপাদন আগের মতো হচ্ছে না। ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও একটু বেশি থাকে। তবে আমাদের ফুলের কোনো সংকট নেই।

এদিকে ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত ঘিরে নগরজুড়ে বইছে উৎসব আমেজ। কোথাও কোথাও সড়কে আঁকা হয়েছে বিশাল রঙিন আলপনা। আবার কোথাও আয়োজন করা হয়েছে জমকালো কনসার্ট।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!