প্রেমিকের বাড়িতে তরুণী লাশ—পুলিশ আত্মহত্যা বললেও তদন্তের নির্দেশ আদালতের

সাতকানিয়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে যাওয়ার পর রনি আক্তার (১৯) নামে এক কিশোরীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। তবে সাতকানিয়া থানা পুলিশ খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলা করায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে ভিকটিমের পরিবার।

বুহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দ্বিতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন জোনায়েদের আদালতে এ আবেদন করা হয়। আবেদন গ্রহণ করে শুনানি করেন বিচারক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোকাররম হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আবেদন গ্রহণ করে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলায় বিবাদীরা হলেন- রনি আক্তারের প্রেমিক সাতকানিয়া বারদোনা মৌলভীপাড়া এলাকার সাব্বির আহমদের ছেলে আমিনুর রহমান (২৭), তাঁর বোনজামাই মো. এনাম প্রকাশ ডিস এনাম (৪০), মো. কায়েস (৩০), আমিনুরের ভাই মো. ফারুক (৩০), আব্দুল হামিদ (৩১), আমিনুরের বোন হাছিনা আক্তার (৩৩) ও নাছিমা আক্তার (৩১)।

আরও পড়ুন: প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে তরুণী ফিরল লাশ হয়ে

মামলা সূত্রে জানা যায়, রনি আাক্তার পেকুয়া থানার শহীদ জিয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সস্টিটিউটের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ৯ মাস আগে আব্দুল হামিদের মাধ্যমে আমিনুরের সঙ্গে পরিচয় হয় রনির। পরিচয় থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। এরপর তাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা হতে থাকে। গত ১৩ মার্চ সকাল ৭টায় কলেজে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হন রনি। এদিন রাত ৮টার দিকে তার ফুফাতো বোনজামাই বাহার উদ্দিনকে ফোনে জানায়, আমিনুরের বাড়ির সামনে বিয়ের দাবিতে অবস্থান করছেন রনি। কিন্তু আমিনুরের পরিবার অসম্মতি জানিয়ে তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে-এ বলে রনি ফোনকল কেটে দেন।

পরে পরিবারের পক্ষ থেকে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে রনি ফোন ধরেননি। পরদিন ১৩ মার্চ রাত ১০টার দিকে রনির মোবাইল থেকে তার চাচাতো ভাই মিজানের ফোনে কল করেন কায়েস। তিনি বলেন, রনিকে যেন তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।

রাত ৩টায় রনির নম্বর থেকে তার ফুফু ছালেহা বেগমের ফোনে জানায়, তাদের বাড়ির সামনে রনিকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাকে অটোরিকশা করে লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে রাত ৪টার দিকে আমিনুরের বোন হাছিনা আক্তার আবারও তার ফুফুকে ফোন করে রনির লাশ নিয়ে যেতে বলে কল কেটে দেন।

এরপর লোহাগাড়া থানা পুলিশ ফোন করে রনির মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে। পরদিন ১৪ মার্চ সকাল ৯টার দিকে রনির ফুফু লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী রনি বিষপানে মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানায়। পরে লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ময়নাতদন্ত শেষে আত্মহত্যা প্ররোচনার এজাহার দায়ের করে স্বাক্ষর নিয়ে পরিবারে কাছে লাশ বুঝিয়ে দেয় পুলিশ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আশপাশের লোক মারফতে জানা যায় রাত ১টায় আমিনুরের বাড়ি থেকে রনিকে বের করে দেওয়ায় তিনি এনামের বাড়ির সামনে গিয়ে সাহায্য চান। কিন্তু এনাম সহযোগিতা না করায় রনি বিষপানে মৃত্যুবরণ করেন।

এদিকে আদালতে করা আবেদন সূত্রে জানা যায়, গত ১২ মার্চ বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে রনিকে নিয়ে কক্সবাজার যান আমিনুর। কিন্তু সেদিন বিয়ে না করে বিকেলে রনির বাসায় তাকে পৌঁছে দিয়ে যান আমিনুর। ফলে বিয়ের দাবিতে আমিনুরের ঘরে যান রনি। সেদিন রাত ৮টায় বাহার উদ্দিনকে ফোনে রনি জানান, আমিনুরসহ তার পরিবারের লোকজন তাকে বেধড়ক মারধর করছে। সে জীবনশঙ্কায় রয়েছে।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!