পেকুয়ায় বালু ফেলে ধ্বংস করা হচ্ছে প্যারাবন

পেকুয়ার উপকূলের মানুষের জান-মালসহ নানা স্থাপনা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় গড়ে তোলা হয়েছে প্যারাবন। দিনদুপুরে ধ্বংস করা হচ্ছে সেই প্যারাবন। ড্রেজার বসিয়ে পাইপের সাহায্যে প্যারাবনের ওপর ফেলা হচ্ছে বালু। এভাবে বালু ফেলায় ইতোমধ্যে মরে গেছে বনের অন্তত একশ গাছ।

জানা গেছে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকায় কুতুবদিয়া চ্যানেলের চরে ২০১১-২০১২ সালে পঞ্চাশ হেক্টর এলাকাজুড়ে বনায়ন করে স্থানীয় বন বিভাগ। গত দশ বছরে সেখানে অন্তত ৫ হাজার বাইন গাছ বেড়ে উঠেছে। প্রতিটি গাছের উচ্চতা এখন ৮ থেকে ১২ ফুট। কিন্তু সবুজ আচ্ছাদিত এই বনের দক্ষিণ অংশে ফেলা হচ্ছে বালু। ফলে বালুতে চাপা পড়ে ধ্বংস হচ্ছে উপকূল রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় প্যারাবনের গাছ।

সরেজমিন দেখা যায়, মগনামা লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে নদীর চরে কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন চলছে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে ড্রেজার বসিয়ে পাইপের সাহায্যে প্যারাবনের ওপর ফেলা হচ্ছে বালু । এতে প্যারাবনের গাছগুলো বালুতে চাপা পড়েছে। অনেক গাছ মরে গিয়ে ভেঙে গেছে।

আরও পড়ুন: বালু তুলছে—সেতু কাঁপছে, যেকোনো সময় আহাজারি

পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, প্যারাবনে বালু ফেলে অন্তত ১০০ গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু বনকর্মীরা নীরব ভূমিকা পালন করছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন বিভাগ। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও প্যারাবনের ওপর বালু ফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে দাবি করে।

বালু
বালুচাপায় ভেঙে পড়েছে প্যারাবনের গাছ – আলোকিত চট্টগ্রাম

স্থানীয় পরিবেশবাদী মাসউদ বিন জলিল জানান, উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বনবিটের দুইশ গজের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটলেও বনকর্মীরা নীরব ভূমিকা পালন করছে। অবিলম্বে প্যারাবন নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

যোগাযোগ করা হলে বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত মোস্তাক মিয়া আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মগনামা লঞ্চঘাট স্টেশনের দক্ষিণ পাশের কালভার্ট প্রশস্ত করতে একটি বাইপাস সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। এতে সাগর থেকে বালু এনে প্যারাবনের পাশে রাখা হচ্ছে। যা পরে জিও ব্যাগে ভরে বাইপাস সড়কের কাজে লাগানো হচ্ছে। এটি বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়ক কাজের অংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল কনস্ট্রাকশনের পক্ষে আমি এই কাজ করছি। তবে আমরা চেষ্টা করছি প্যারাবনের যাতে ক্ষতি না হয়।

আরও পড়ুন: বালু তোলার নেতৃত্বে ইউপি সদস্য, দুই কৃষকের অভিযোগ পেয়ে অভিযানে গেলেন ম্যাজিস্ট্রেট

একই প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার মহসিন আহমেদ বলেন, ক্ষতির বিষয়টি জানতে পেরে আমরা প্যারাবনের ওপর বালু ফেলা বন্ধ রেখেছি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মগনামা উপকূলীয় বনবিট কর্মকর্তা মো. মোবারক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্যারাবনের ওপর বালু না ফেলতে তাদের মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করছে না। জনবল সংকটের কারণে আমরা সার্বক্ষণিক বিষয়টি নজরদারি করতে পারছি না। প্যারাবন ধ্বংসে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই প্রসঙ্গে উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, প্যারাবন ধ্বংসের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

মুকুল/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!