হাসপাতালে কাতরাচ্ছে বিস্ফোরণে আহত ৩ পঙ্গু রোগী, কৃত্রিম হাত—পা দেবেন আ জ ম নাছির

প্রতিদিন একবার মরে একবার বাঁচি। কেউ কোনোদিন জাহান্নাম দেখেছে কিনা জানি না! আমার মনে হয় দুনিয়াতেই আমি জাহান্নাম দেখেছি। আল্লাহ কাউকে যেন এমন মৃত্যু দান না করেন সেজন্য আমি দোয়া করি।

অশ্রুসিক্ত চোখে বলছিলেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ডান হাত হারানো মারুফ হোসেন।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে গেলেন আ জ ম নাছির, দিলেন অর্থ সহায়তা

নোয়াখালী সদর কালা দরাব জালাল আহমেদের বাড়ির শাহাবুদ্দিনের ছেলে মারুফ হোসেন (২৪)। তিনি সাত ভাই-বোনের মধ্যে বড়। বিয়ে করেছেন বছর কয়েক হয়েছে। দুর্ঘটনার আগের দিন শুক্রবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে শিপমেন্টের পণ্য নিয়ে এসেছিলেন বিএম কনটেইনার ডিপোতে। পণ্য আনলোড করার অপেক্ষায় ছিলেন বিএম ডিপোতে। কিন্তু শনিবার রাতেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ডান হাত হারিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে তাঁর বাম হাতের বাহু ও আঙ্গুল আগুনে ঝলসে গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মারুফ সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘একজন ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। এসময় তার সামনেই আমি ছিলাম। হঠাৎ কনটেইনার বিস্ফোরণ হলে আমি এক ঝটিকা বাতাসে উড়ে পড়ে যায়। উঠে দেখি আগুনে ঝলসে যাওয়া বেশ কিছু মানুষ কাতরাচ্ছে। তাদের শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। এসময় আমার ডান হাত চামড়ার সঙ্গে লেগে ঝুলে ছিল। নিজে বাঁচতে বাম হাত দিয়ে ডান হাতটি আকড়ে ধরে বেশ কিছু অঙ্গার দেহ ডিঙ্গিয়ে দ্রুত ডিপো থেকে বেরিয়ে আসি। এরপর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’

বর্তমানে মারুফের শারীরে প্রচুর জ্বালা করছে। এমন অবস্থায় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন আজ (সোমবার) সকালে দেখতে গিয়েছিলেন। এসময় তিনি আমার হাত প্রতিস্থাপন করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। আমার মতো আরো বেশ কয়েকজনের হাত-পা প্রতিস্থাপন করে দিবেন বলে জানতে পেরেছি- যোগ করেন মারুফ।

মারুফের মতো ডান হাত হারিয়েছেন বিএম কনটেইনার ডিপোর প্রহরী নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও বারুদি এলাকার তারা মিয়ার ছেলে হযরত আলী (৩৮)।

ডিপোতে কনটেইনার রিপেয়ারিং কাজ করতেন নোয়াখালী সুবর্নচর নুরু জমিদার বাড়ির কামাল উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ হোসেন হৃদয় (১৮)। তিনি হারিয়েছেন ডান পা। তারা সবাই চমেকের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

সোমবার (১৩ জুন) সকালে চিকিৎসাধীন এসব রোগীর সঙ্গে কথা বলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এসময় তিনি সীতাকুণ্ড ট্রাজেডিতে আহত সব রোগীর খোঁজ খবর নেন। তাদের চিকিৎসা সেবার জন্য অর্থ সহায়তা দেন চমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের কাছে।

এসময় তিনি হাত-পা হারানো এসব রোগীর কৃত্রিম হাত ও পা প্রতিস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁর এ আশ্বাসে হাত-পা হারানো এসব মানুষের মলিন মুখে ফিরেছে স্বস্তি।

রিয়াজ হোসেন হৃদয়ের বড় ভাই রিপন বলেন, সকালে চট্টগ্রামের মেয়র নাছির ভাই আমার ভাইকে দেখতে এসেছেন। তিনি আমার ভাইয়ের নকল হাত লাগিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন। এ হাত লাগাতে অনেক টাকা প্রয়োজন, যা আমাদের মতো পরিবারের পক্ষে বহন করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। তাঁর এমন ভরসায় আমার ভাই খুশি হয়েছে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বিস্ফোরণ—মধ্যপ্রাচ্য থেকে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান আ জ ম নাছিরের

অন্যদিকে হযরত আলীর বড় বোন রেহেনা বেগম বলেন, নাছির ভাই নামে চট্টগ্রামের একজন নেতা সকালে আসছিলেন। তিনি বলেছেন, আমার ভাইয়ের পা প্রতিস্থাপন করে দিবেন। তাঁর এমন দানে আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য অনেক অনেক দোয়া করি। তিনি যেন মানুষের আরো সেবা করতে পারেন। আল্লাহ তাঁকে এসবের উত্তম প্রতিদান দিবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের  সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় সরকার মানবিক দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। এছাড়া  চট্টগ্রামের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা ইতিহাসেও নজির হয়ে থাকবে।

বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে যারা হাত-পা হারিয়েছেন তাদের জন্য আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদেরকে হয়ত আর্থিক সহযোগিতা করা যায়। কিন্তু এই টাকাতো চিরদিন থাকবে না। এখন তাদেরকে সুচিকিৎসায় সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি তাদের শরীরে কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করলে আমি মনে করি তারা কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাবে এবং দৈনন্দিন কর্মে ফিরে যেতে আগ্রহী হবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!