৩ মাদক পাচারকারীর যাবজ্জীবন জেল, পৌনে ২ কোটি টাকা যাবে সরকারি কোষাগারে

কক্সবাজারে ৪২ কোটি মূল্যের ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাজাপ্রাপ্তদের ৭ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বস্তাভর্তি নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫শ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় ৪ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নজরুল ইসলাম ও সোলতানা রাজিয়া বেগমের ছেলে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক (৩৭), মোজাফফর আহমদ ও হাজেরা খাতুনের ছেলে নুরুল আমিন প্রকাশ বাবু (৫৫) এবং আবুল হোসেন ও হাসনা বানুর ছেলে আবুল কালাম (৫০)। তিনজনের বাড়ি কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছড়ায়। তবে আসামি আবুল কালামের ছেলে শেখ আবদুল্লাহকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি অ্যাড. ফরিদুল আলম ফরিদ। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাড. মো. ছৈয়দ আলম, অ্যাড. শাহজালাল চৌধুরী, অ্যাড. নুরুল মোস্তফা মানিক এবং অ্যাড. আবদুল বারী।

আরও পড়ুন: যাবজ্জীবন জেলে থাকতে হবে ৩ সোনা চোরাকারবারিকে

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ) একটি টিম কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী খুরুসকুল সংযোগ সেতুর উত্তরে ভারুয়াখালী খাল থেকে একটি কাঠের বোট আটক করে। এসময় বোটে থাকা জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও নুরুল আমিন প্রকাশ বাবুকে আটক করা হয়। তবে রোহিঙ্গা সৈয়দ আলম কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে আটকদের দেখানো মতে বোট থেকে ৪২ কোটি টাকা মূল্যের ১৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

এরপর ওইদিন বিকেল সাড়ের ৫টার দিকে কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়ার জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ইয়াবা বিক্রির নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫শ টাকা উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে আবুল কালাম এবং তার ছেলে শেখ আবদুল্লাহকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ) ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় ২০১৮ সালে মাদক আইনে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক, নুরুল আমিন প্রকাশ বাবু, আবুল কালাম, শেখ আবদুল্লাহসহ অজ্ঞাত আরো ৭-৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কক্সবাজার সদর থানার এসআই এসএম শাকিল হাসান ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩২ জনকে সাক্ষী করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চার্জশিট দাখিলের পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি মামলার বিচার শুরু হয় কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইলের আদালতে।

মামালায় ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্কসহ বিচারের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এরপর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, মামলার চার্জ গঠনের ৫২ দিন পর বিচারকাজ সম্পন্ন করে আজ রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় ৪ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

পিপি আরও বলেন, রায়ে তিন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও নুরুল আমিন প্রকাশ বাবুকে ৫ লাখ টাকা এবং আবুল কালামকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে প্রত্যেককে আরও ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আসামি আবুল কালামের ছেলে শেখ আবদুল্লাহকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উদ্ধার করা ইয়াবা বিক্রির ২টি বস্তাভর্তি নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫শ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন আদালত।

বিডি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!