পতেঙ্গা সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে বেপরোয়া ‘চাঁদাবাজি’

চট্টগ্রাম শহরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসেন বিনোদনপ্রেমীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনে লাখো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এখানে। তবে সৈকতে বেড়াতে আসাদের পড়তে হচ্ছে চেকপোস্ট বিড়ম্বনায়। যেখানে নিয়মিত আদায় করা হচ্ছে টোকেনবিহীন টাকা। বিভিন্ন পরিবহন থেকে টাকা আদায় ওপেন সিক্রেট হলেও দেখার কেউ নেই।

তবে আশ্চর্য্যের বিষয়, খোদ ট্যুরিস্ট পুলিশের সামনেই চলছে এমন চাঁদাবাজি। আর এসব অপকর্মের নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় জামাল, নুরে আলম ও নুর মোহাম্মদ নামের তিন ব্যক্তি। যারা সৈকতে আসা বিভিন্ন গাড়ি থেকে নিয়মিত টাকা তুলছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের নাম ভাঙিয়ে। তাদের এই চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাড়ি চালকরা। এই চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা হলেও পাল্টায়নি পুরনো দৃশ্যপট।

জানা গেছে, সৈকতে আসা প্রতি গাড়ি থেকে টাকা আদায় করা হলেও চালকদের কোনোরকম টোকেন দেওয়া হয় না। গাড়িপ্রতি সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই টাকা কেউ দিতে না চাইলে করা হয় দুর্ব্যবহার। এছাড়া টাকা আদায়ে হাতাহাতির ঘটনাও আছে অহরহ।

তবে অভিযুক্তদের দাবি, খুশি হয়ে কেউ ৫ থেকে ১০ টাকা দিলে নেন তারা। আবার ট্যুরিস্ট পুলিশও কথা বলছেন একই সুরে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ট্রাক, বাস ও অটোরিকশা যেন সৈকত এলাকায় ঢুকতে না পারে সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্টে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চেকপোস্টে দায়িত্বপালনকারীরা মেতে উঠেন নীরব চাঁদাবাজিতে।

নগরের খুলশী থেকে আসা দর্শনার্থী এনামুল কবির বলেন, ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে প্রায়সময় পতেঙ্গা সৈকতে ঘুরতে আসি। প্রতিবার চেকপোস্টের নামে গাড়ির জন্য টাকা দিতে হয়। অথচ সেই টাকা আদায়ের রশিদ কাউকে দেওয়া হয় না।

শহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন বলেন, পতেঙ্গা সৈকতের প্রবেশমুখে চেকপোস্টের নামে চাঁদাবাজি এখন ওপেন সিক্রেট। খোদ ট্যুরিস্ট পুলিশ এই চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক। জামাল ও নুরে আলমরা টাকা আদায় ছাড়া কাউকে চেকপোস্টের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না। চেকপোস্টে তোলা চাঁদার টাকার ভাগ পায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ এলাকার কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ।

তিনি আরও বলেন, অটোরিকশা থেকে ১০ টাকা, প্রাইভেট কার-মাইক্রো থেকে ৫০ থেকে ১শ’ টাকা, পিকনিকের গাড়ি থেকে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা চাঁদা আদায় করে জামাল-নুরে আলমরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিদিন ৫শ থেকে ৬শ গাড়ি পতেঙ্গা সৈকতে প্রবেশ করে। দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা উঠানো হয়। এছাড়া শুক্রবার ও ছুটির দিনে সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার। সেই হিসাবে প্রতিমাসে চেকপোস্টে আয় হয় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। এ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না হলেও পকেট ভারি হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশের।

আরও জানা যায়, চেকপোস্টে চাঁদাবাজি নিয়ে জামালের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে। ২০২০ সালের ৭ মার্চ গাড়ি নিয়ে সৈকতে প্রবেশে বাঁধা এবং চাঁদা দাবির অভিযোগে এ মামলা করেন জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি। মামলার পর আসামি জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জামিনে বের হয়ে আবারও পুরনো পেশায় ফিরেছেন জামাল।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মো. জামাল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চেকপোস্টে প্রতিদিন আমি, নুরে আলম এবং নুর মোহাম্মদ দায়িত্ব পালন করি। আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করি না। কেউ খুশি হয়ে ৫-১০ টাকা দিলে নিই। এখানে জোরাজুরি ও হাতাহাতির কিছু নেই।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ট্যুরিস্ট পুলিশের পতেঙ্গা সাব-জোনের অফিসার ইনচার্জ মো. ইসরাফিল মজুমদার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের লোকবল সংকটের কারণে চেকপোস্টে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেউ খুশি হয়ে তাদের ৫-১০ টাকা দিলে ওরা নেয় বলে জানি। যদি প্রতি গাড়ি থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে চেকপোস্ট তুলে দেওয়া হবে এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!