পঞ্চপাণ্ডবের ৪ জনই নেই দলে, তারুণ্যে তাকিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ক্রিকেট তামিম-সাকিব-মাশরাফি-মুশফিক-রিয়াদকে বলা হয় পঞ্চপাণ্ডব। এ পঞ্চপাণ্ডবের তাণ্ডব কত ম্যাচে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিয়েছে তার হিসাব করা কঠিন। কিন্তু আজ যখন ‘দুর্দান্ত’ পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ তখন নেই সেই পঞ্চপাণ্ডবের ৪ জনই।

ক্রিকেট থেকে আগেই অবসর নিয়ে রাজনীতিতে মনোযোগী হয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাকি তিনজনের সবচেয়ে বেশি ভরসা যার ওপর, যাকে সমীহ করে ‘গেম প্ল্যান’ করে প্রতিপক্ষ সেই সাকিব বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে পড়ে। টি-টুয়েন্টির নিয়মিত অধিনায়কত্ব যার কাঁধে, ওপেনিংয়ে এখনো চোখ বন্ধ করে ভরসা করা হয় যার ওপর, সেই তামিমও নেই বাংলাদেশ দলে। আগে থেকেই ইনজুরির সঙ্গে লড়তে থাকা এ মারকুটে ব্যাটসম্যান চিকিৎসা নিতে দেশ ছাড়ছেন আজ (শুক্রবার) রাতেই।

পঞ্চপাণ্ডবের চতুর্থজন মুশফিকুর রহিম। বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে তাকে ‘বিশ্রাম’ দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও তিনি নিজে বলছেন, তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রইলো বাকি এক। তিনি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বর্তমান দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ আর পুরোনো খেলোয়াড় একমাত্র তিনিই। দলের আর্মব্যান্ড তাই তাঁরই হাতে। কিন্তু যাদের নিয়ে যুদ্ধের মাঠে তিনি লড়বেন তাঁর সেই সৈন্যবাহিনীর অর্ধেকেরও বেশি নতুন মুখ।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পাকিস্তানের ম্যাচ—৭ স্তরের নিরাপত্তায় ৯০০ পুলিশ

শুধু পঞ্চপাণ্ডবের চারজন নেই তাই নয়, বাদ পড়েছেন দীর্ঘদিন ধরে বাজে পারফরম্যান্স করা লিটন দাশ, সৌম্য সরকারও। ইনজুরির কারণে বাদের তালিকায় আছেন ফাস্ট বোলার সাইফউদ্দিন। আর না খেলেই বাদ পড়েছেন আরেক পেসার রুবেল হোসেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিশ্বকাপ দলের ছয়জনকে বাদ দিয়ে ডাকা হয়েছে নতুন ৬ জনকে। যাদের বেশিরভাগই থাকছেন আজকের (শুক্রবার) প্রথম ম্যাচে।

চট্টগ্রামের ছেলে ইয়াসির আলি চৌধুরী, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান ও আকবর আলির প্রথম একাদশে থাকা অনেকটাই নিশ্চিত। ইয়াসির আগেও জাতীয় দলে ডাক পেলে খেলার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেলে অবসান ঘটবে অভিষেকের দীর্ঘ অপেক্ষার। নাজমুল হোসেন শান্ত খেলেছেন টেস্ট-ওয়ানডে সব ফরম্যাটেই।

টেস্ট খেলা সাইফ হাসানকে এই সিরিজের আগে পর্যন্ত কখনোই টি-টোয়েন্টির জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়নি। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের নেতা আকবর আলীও দলের দৃশ্যপটে ছিলেন না কোথাও। কিন্তু ‘নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা বাংলাদেশ’ এখন ভরসা রাখতে চাইছে তরুণদের ওপরেই।

আরও পড়ুন: সেমিফাইনালের আগমুহূর্তে দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে নিয়ে শঙ্কায় পাকিস্তান

তবে বিশ্বকাপের সব হতাশা ঝেড়ে উদিত সূর্যের পানে তাকাতে চান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। হতাশার এই সাম্প্রতিক অতীতকে পেছনে ফেলে তিনি আলিঙ্গন করতে চান সম্ভাবনাময় আগামীকে।

ম্যাচের আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদ বলেন, বিশ্বকাপ নিয়ে এখন আর কথা বলছে চাচ্ছি না। এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে মনোযোগ দিতে চাই। এই তিনটা ম্যাচে আমরা দলের জন্য কতটুকু ভালো অবদান রাখতে পারি, ওটাই মুখ্য বিষয়। যে জিনিসগুলো আগে হয়ে গেছে, সেসব নিয়ে চিন্তা করলে বরং নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তিনি বলেন, আমরা পজিটিভভাবে চিন্তা করছি সবকিছু। সিরিজটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে৷ পাকিস্তান সেরা দলগুলির একটি এই মুহূর্তে। আমাদের অনেকগুলো নতুন ছেলে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে।

সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত দলগুলির একটি পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচেই ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের জানান দিয়েছিলেন বাবর আজমের দল। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে উড়তে থাকা পাকিস্তান হোঁচট খায় সেমিফাইনালে, অস্ট্রেলিয়ার কাছে। দলটির স্কিল নিয়ে প্রশ্ন নেই, তার ওপর প্রায় সব খেলোয়াড়ই আছেন টপ ফর্মে। রয়েছে দুর্দান্ত টিম স্পিরিট। যদিও এই ম্যাচে কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে পাকিস্তান।

ম্যাচের আগের দিনই ১২ জনের দল ঘোষণা করেছে তারা। সেখানে রাখা হয়নি একাদশের নিয়মিত দুই সদস্য আসিফ আলি ও ইমাদ ওয়াসিমকে। তবে যারা আছেন, তারাও কম যান না। হায়দার আলি, খুশদিল শাহরা দারুণ প্রতিভাবান ও আগ্রাসী। মোহাম্মদ নওয়াজ তো বেশ পরীক্ষিত এবং বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে বেশ।

আরও পড়ুন: জিম্বাবুয়ের মাঠে টাইগারদের দুরন্ত জয়, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

ব্যাটিং লাইনআপে বাবর, রিজওয়ান, শোয়েব মালিক যেমন আতঙ্কের নাম, তেমনি বোলিংয়ে শাহীন শাহ আফ্রিদি আর শাদাব খান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠতে পারেন যেকোনো সময়। যদিও আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নিয়ম রক্ষার সমীহ দেখালেন পাক অধিনায়ক।

বাবর বলেন, এটা ওদের হোম সিরিজ। কাজেই ওদেরকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। ওদের কয়েকজন ক্রিকেটার নেই, তবে যারা আছে, তারাও কম নয়। বিপিএল খেলে ওরা সবাই। ওদেরকে সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

নিজেদের কথাও বলতে ভুলেননি তিনি। ‘বিশ্বকাপে যেভাবে এগোচ্ছিলাম, এরপর সেমি-ফাইনাল হেরে যাওয়ার পর অবশ্যই খারাপ লেগেছে। পুরো দলই কষ্ট পেয়েছে। পরে সবাই মিলে বসেছি, ভুলগুলো নিয়ে কথা বলেছি, কোথায় আমরা ভালো করতে পারতাম, কোথায় উন্নতি করতে হবে, এসব নিয়ে কথা বলেছি।’

বাবর বলেন, পুরো দলের আত্মবিশ্বাস অটুট আছে। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আছে। আত্মবিশ্বাস দারুণ দলের। মোমেন্টাম আছে আমাদের। আমরা নিজেদের শক্তির জায়গায় থাকব এবং বিশ্বকাপে যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছি, সেটিই ধরে রাখার চেষ্টা করব।

দুই দলের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচ দুপুর ২টা থেকে।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!