নিউমার্কেট টু ফতেয়াবাদ রুট—বাসে বাড়তি ভাড়ার জুলুমি, নেপথ্যে লালু

চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ রুটে বাস চালকদের নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে তারা। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পরও নির্ধারিত স্টপেজে বাস না গিয়ে যাত্রীদের মুরাদপুর অথবা অক্সিজেন নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবই হচ্ছে বাস চালকদের ইচ্ছেমতো। তাদের এমন আচরণে অতিষ্ঠ সাধারণ যাত্রীরা। আর এসবের পেছনে লাইনম্যান লালু জড়িত বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ৩ নম্বর রুটের মিনিবাসের স্টপেজ নিউমার্কেট মোড় থেকে ফতেয়াবাদ পর্যন্ত। এর দূরত্ব সাড়ে ১৪ কিলোমিটার। এই দূরত্বের ডিজেলচালিত বাসের বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া ৩১ টাকা। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আর গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোলচালিত বাসের ভাড়া ১৫ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

এদিকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫-১০ টাকা বাড়তি নিলেও ফতেয়াবাদ পর্যন্ত যাচ্ছে না বাস। নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে মুরাদপুর কিংবা অক্সিজেনে। ফলে যাত্রীদের আরেকটি গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের সময় ও টাকা দুটিই নষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ৩ নম্বর রুটের বাসগুলো সকালে নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ আসা-যাওয়া করে। সকালের চিত্র মোটামুটি ঠিক থাকলেও বিকালের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। বিকালে অফিস ও গার্মেন্ট ছুটির সময় হওয়ায় বাড়তি টাকা ইনকামে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বাসচালক ও হেলপাররা। যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নিতে দেখা যায়। বেশি ভাড়ার জন্য নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো মুরাদপুর অথবা অক্সিজেন এসে থেমে যায়। সেখান যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আবার নিউমার্কেট চলে যায়। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পোশাক শ্রমিকদের ভাড়া মারেন। যার ফলে এই রুটের সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

শুধু তাই নয়, ৩ নম্বর রুটের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাসের ফিটনেস নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় চালানো হচ্ছে বাসগুলো। এই রুটের বেশিরভাগ বাসচালক এবং হেলপার অদক্ষ ও নেশাগ্রস্ত। এ কারণে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। এমনকি এখন চলন্ত বাসে ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। নির্ধারিত স্টপেজে বাস থামানোর নিয়ম থাকলেও চালকরা ট্রাফিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করছে। এসব কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে বন্য হাতি আছড়ে মারল কৃষককে

একাধিক ভুক্তভোগী যাত্রী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ রুটের বাস চালকদের অনিয়ম ও বাড়তি ভাড়া আদায় আমাদের আর সহ্য হচ্ছে না। এক কথায় তাদের কাছে আমরা জিম্মি। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেওয়ার পরও নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে না। মুরাদপুর অথবা অক্সিজেন নামিয়ে দেয় যাত্রীদের। আবার কেউ যদি নিউমার্কেট থেকে পাঁচলাইশ মোড়ে নামে তাকেও ১৫ থেকে ২০ টাকা দিতে হচ্ছে এবং ফতেয়াবাদ গেলেও সমপরিমাণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। যেখানেই যান না কেন বাসে ওঠা-নামা করলেই নির্ধারিত ভাড়াতো নিচ্ছে বরং তার চেয়ে ৫-১০ টাকা বাড়তি নিয়ে নিচ্ছে।

তারা আরও বলেন, আমরা সাধারণ যাত্রীরা তাদের এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে চালক ও হেলপারদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। এমনকি গায়ে হাতও তুলে বসে। বাসের নির্ধারিত সিটের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে উঠানো হয়। গাদাগাদি করে উঠানোর কারণে পকেটমার ও মলমপার্টির সদস্যরা সুযোগ পায়। তারা যাত্রীদের মোবাইল, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। বাস চালকদের এমন নৈরাজ্য চলতে পারে না। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বলতে চাই, বাস চালকদের অনিয়ম ও নৈরাজ্য বন্ধ করে সাধারণ যাত্রীদের মুক্তি দেওয়া হোক। না হলে সড়কে নামতে বাধ্য হবো।

এ বিষয়ে জয় নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, বাসগুলো যাওয়ার নির্ধারিত স্থান নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ হলেও মুরাদপুর অথবা অক্সিজেন পর্যন্ত যাওয়ার পর আর যায় না। সেখান থেকে বাসগুলো লাইনে দিয়ে হাটহাজারী অথবা আবার নিউমার্কেট চলে যায়। ঠিকই কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি নিয়ে নিচ্ছে। সকালে আসার সময় সবাইকে ডেকে তুলে, রাতে ওরা বাহানা করে আর যাত্রীদের জিম্মি করে রাখে। সমস্যা খুঁজতে গিয়ে জানলাম ফতেয়াবাদের লাইনম্যান লালুর ইশারায় সব হচ্ছে। সে বাস চালকদের যেমন বলছেন তেমনই হচ্ছে। প্রতি ট্রিপে বাস দাঁড়ালে তাকে টাকা দিতে হয়। আমার মনে হয় লালুর ইশারা বন্ধ করতে পারলে যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করবো আপনারা এসব অনিয়ম ও নৈরাজ্য বন্ধ করেন। না হলে সাধারণ মানুষ সড়কে নামতে বাধ্য হবে।

আরও পড়ুন: হঠাৎ বদলি হাটহাজারী থানার সেই ওসি রফিক, যেতে হবে সিআইডিতে

৩ নম্বর রুটের মিনিবাস চালক জসিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এখন গার্মেন্টস কা রখানা ছুটির সময়। বেশিরভাগ গাড়ি ওই দিকে চলে গেছে। কিছু গাড়ি নিউমার্কেট এলাকায় আছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে মুরাদপুর পর্যন্ত গিয়ে আবার নিউমার্কেট চলে আসি। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই আমরা এটা করছি।

এ বিষয়ে আরেক মিনিবাস চালক করিম বলেন, হ্যাঁ, নিউমার্কেট এলাকায় গাড়ির সংকট চলছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু বাস চালক সরাসরি ফতেয়াবাদ না গিয়ে মুরাদপুর অথবা অক্সিজেন নামিয়ে দিচ্ছে। সেখান থেকে আবার নিউমার্কেটের যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিছু বাস চালকের কারণে সবার দোষ হয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ করা দরকার।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নিউমার্কেট সড়কে মিনিবাসের এমনিতেই সংকট। তারওপর অফিস টাইম ও গার্মেন্টস কারখানা ছুটি হলে আমাদেরকে সেখানেও কিছু বাস পাঠাতে হয়। কারণ গার্মেন্টসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাস এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বললেও সমাধান এখনও পাইনি। আশা করি তিন মাসের মধ্যে বাসের সংকট দূর হবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!