পিটুনি খেয়েও থামছে না সানাউল্লাহর চাঁদাবাজি, হালিশহরে ব্যাটারি রিকশার বেপরোয়া বাণিজ্য
অভিযুক্তদের সঙ্গেই খোশগল্পে তদন্তকারী কর্মকর্তা
নগরের হালিশহরের নিবন্ধনবিহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতির কথিত সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ চৌধুরী। প্রবাসজীবন থেকে ফিরেই অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেন চাঁদাবাজির শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট। সম্প্রতি ব্যাটারি রিকশার চাঁদা তুলতে গিয়ে গনধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, সানাউল্লাহ চৌধুরী চাঁদাবাজির অর্থ যোগান দেন জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনকে। এ নিয়ে হালিশহর এলাকার রিকশাচালক ও স্থানীয়রা চলতি মাসে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন। যেখানে সানাউল্লাহ চৌধুরী, রনজিৎ, জনিসহ কয়েজনকে চাঁদাবাজ ও জামায়াত শিবিরের সক্রিয় কর্মী উল্লেখ করা হয়।
জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নগরের বন্দর থানাধীন আনন্দবাজার এলাকার আব্দুর গফুর শাহ মাজারের পাশে টোকেনের টাকা নেওয়ার জন্য একটি অটোরিকশা থামান সানাউল্লাহ চৌধুরী। পরে চাঁদার টাকা দেওয়ার জন্য ওই চালককে চাপাচাপি শুরু করেন। ওই চালক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করেন তিনি। এ দৃশ্য দেখে অন্য অটোরিকশা চালকরা এগিয়ে এসে সানাউল্লাহকে রাস্তায় গণধোলাই দেয়। পরে এক পথচারী সানাউল্লাহকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দেয়।
আরও পড়ুন : হালিশহরে ৩১ স্পটে চার্জ নামে চাঁদাবাজি, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি রিকশা
আনন্দবাজার এলাকার চা দোকানদার সাইফুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, একজন ব্যাটারি রিকশাচালক আমার দোকান থেকে চা খেয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একজন লোক তার গতিরোধ করে টোকেনের টাকা দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু ওই চালক টোকেনের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে অন্যান্য চালকরা তা দেখতে পেয়ে মারধর করা ব্যক্তিকে গণধোলাই দেয়। পরে জানতে পারি ওই লোক হালিশহর এলাকার ব্যাটারি রিকশার চাঁদাবাজ সানাউল্লাহ চৌধুরী।
তবে গণধোলাইয়ের কথা অস্বীকার করেন সানাউল্লাহ চৌধুরী। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি কোনো গনধোলাইয়ের শিকার হইনি। এছাড়া আমি জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় কর্মীও না।
এদিকে অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্বে আছেন পাহাড়তলী থানার উপপরিদর্শক মো. সাহেদ। তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া মাত্রই তিনি প্রতিবেদকের ওপর ক্ষেপে যান। উচ্চস্বরে তিনি বলেন, ‘আপনি এই অভিযোগ নিয়ে এত কথা কেন বলছেন? আপনার এত মাথাব্যথা কীসের? আমি আপনাকে এই বিষয়ে কিছুই বলতে বাধ্য না। আপনি আপনার কাজ করুন।’ বলেই মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এসআই সাহেদ।
বিষয়টির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহের জন্য যেকাউকে ফোন করতেই পারেন। কিন্তু আপনার সাথে রেগে গিয়ে কথা বলাটা আমার অফিসারের উচিত হয়নি। আমি এখনই তাকে জিজ্ঞেস করব।
তিনি আর বলেন, সানাউল্লাহ চৌধুরীসহ কয়েকজনের নামে যে অভিযোগটি পুলিশ কমিশনার স্যারের অফিস থেকে এসেছে তা একান্তই গোপনীয়। তা সঠিক তদন্ত করে কমিশনার স্যারের কাছে পাঠানো হবে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক পুলিশ সদস্য আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অভিযোগের পর থেকেই রনজিৎ-জনিকে প্রায়সময় থানা ও থানার বাইরে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে খোশগল্পে মত্ত থাকতে দেখা গেছে।
এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম