‘তদন্তবন্দী’ চট্টগ্রামে শিশু খুন, কিনারা পাচ্ছে না পুলিশ—সন্দেহের তীর পরিবারের দিকে

১৫ দিন পার হলেও পুলিশ চট্টগ্রামের শিশু খুনের রহস্যের নাগাল পাচ্ছে না। এ খুনের ঘটনায় হাটহাজারী থানা পুলিশের তদন্তে তেমন কোনো গতিও নেই। গতিহীন তদন্ত নিয়ে পরিবারও চুপ। এ নিয়ে দিন দিন বাড়ছে খুনের রহস্য।

তবে এ খুনের ঘটনায় পরিবারের দিকেই সন্দেহের আঙুল তুলেছে স্থানীয়দের কেউ কেউ। তারা বলছে, পরকীয়া, না হয় পারিবারিক হিংসায় খুন হয়েছে অবুঝ শিশু ওয়ালিদ।

চট্টগ্রামে হাটহাজারীর পূর্ব শিকারপুরে নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সাড়ে তিন বছরের শিশু ওয়ালিদ। ঘটনার ১৫ দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। খুনের রহস্যের কিনারাও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

গত ১৫ জুন হাটহাজারীর পূর্ব শিকারপুরের নিয়ামত আলী এলাকায় নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হয় আরব আমিরাত প্রবাসী মু. জাবেদ ও ইসরাত জাহান দম্পতির একমাত্র সন্তান মু. ওয়ালিদ।

এ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে এলাকায় বিরাজ করছে চাঞ্চল্য। ঘটনার একদিন পর নিহতের চাচা মু. আজাদ (২৮) বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এমনকি এ ঘটনার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তে থাকা পুলিশের তেমন দেখাও মিলছে না বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত শিশু ওয়ালিদের পরিবারের সঙ্গে এলাকার কারো কোনো বিরোধ ছিল না। এছাড়া যে বাড়িতে শিশু ওয়ালিদকে হত্যা করা হয় তার আশপাশে রয়েছে কয়েকটি বাড়ি। এ বাড়ির অবস্থান অনুযায়ী এত অল্প সময়ের মধ্যে বাইরের কেউ ঘরে ঢুকে খুন করে বের হওয়া সম্ভব না।

নিহত ওয়ালিদের বাবা মু. জাবেদের বন্ধু মু. জাহেদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জাবেদ আমার স্কুলজীবনের বন্ধু। বাড়ি থেকে বাজারের দিকে আসলে প্রায়সময় তাদের বাড়িতে যেতাম। হত্যার কয়েকদিন আগেও তাদের বাড়ির উঠানে ওয়ালিদকে খেলতে দেখেছিলাম। এমন নির্মমভাবে নিষ্পাপ একটা শিশুকে কেন হত্যা করা হলো তা নিয়ে এলাকার মানুষজনও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। কারণ খুন হওয়া ওয়ালিদের বাড়ির অবস্থান হচ্ছে পাশাপাশি কয়েকটা বাড়ির মাঝখানে। তারা প্রত্যেকই আত্মীয়স্বজন। এ বাড়িতে বাইরের কেউ যাতায়াত করলে আশপাশের বাড়ির কেউ না কেউ দেখার কথা। তবে পরিবারের বা আশপাশের আত্মীয়দের বাড়ির কারো সম্পৃক্ততা ছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব না।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে শিশু খুন—ভবন মালিককে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে ৩ খুনিকে

স্থানীয় দোকানদার হাবিবুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এই পরিবারের সঙ্গে এলাকার মানুষের সুসম্পর্ক রয়েছে। মাসখানেক আগে দোকান বিক্রি করে আরব আমিরাতে পাড়ি জমানো ওয়ালিদের বাবা জাবেদের সঙ্গে কারো তেমন কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। এছাড়া এই পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল না। এ বাড়ির চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ওয়ালিদের বাবার মতো বাকি দুজনও প্রবাসী। বাড়িতে রয়েছে শুধু এক ভাই, ওয়ালিদের ছোট চাচা মুহাম্মদ আজাদ। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাই এলাকার কারো সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকার কোনো কারণই নেই। কাছের কেউ ছাড়া বাইরের কেউ খুন করলে এতদিন ধামাচাপা থাকত না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, হয়ত পরকীয়ার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা কিংবা পারিবারিক হিংসার বলি হতে হয়েছে ছোট্ট ওয়ালিদকে।

যোগাযোগ করা হলে ওয়ালিদের চাচা মু. আজাদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের সঙ্গে যেহেতু কারো তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না, তাই ওয়ালিদকে কেন হত্যা করা হয়েছে সেটা কোনোভাবেই বুঝতে পারছি না। ঘটনার দিন আমার ভাবী, বোন আর মা পুকুরে একসঙ্গে গোসল করতে গেলে ওয়ালিদ একা বাড়িতে খেলছিল। যা হওয়ার ওই সময়ের মধ্যেই হয়েছে। ঘটনার পরপর পুলিশ একবার আসলেও এতদিন পার হয়ে গেলেও আর তদন্তে আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর অভিযোগ অস্বীকার করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। আমরা প্রতিদিনই তদন্তে যাচ্ছি। এ ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা দ্রুত বের করা হবে।’

এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কাউকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করিনি। তবে দ্রুত আমরা আমাদের তদন্ত কার্যক্রম শেষ করব।’

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!