ডেঙ্গুর হানা চট্টগ্রামেও, মাথাব্যথা নেই সিটি করপোরেশনের—১২ এলাকায় বাড়ছে রোগী

ডেঙ্গুর মৌসুম জুন-জুলাই-আগস্ট মাস। জুন-জুলাই শেষ হলেও চলছে আগস্ট মাস। জুনে ডেঙ্গু রোগী তুলনামূলক কম থাকলেও জুলাইয়ে ছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আগস্টের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।

এদিকে ডেঙ্গু বিস্তার রোধে ২৬ জুলাই (মঙ্গলবার) চট্টগ্রামে সপ্তাহব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এরপরও ডেঙ্গুর বিস্তার কমেনি।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসে ৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া চলতি আগস্টে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২ জন। জুলাইয়ে আক্রান্ত ৩৯ জনের মধ্যে ২৩ জন ছিল নারী। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৬ জন। এদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তরা ডবলমুরিং, হালিশহর, আগ্রাবাদ, সাগরিকা, ধনিয়ালাপাড়া, সুপারিওয়ালাপাড়া, দেওয়ানহাট, বাচা মিয়া রোড, পাঠানটুলি, পাহাড়তলী, রামপুর ও বন্দর এলাকার। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ছিল ডবলমুরিং এলাকার, ১৪ জন। এরপর পাহাড়তলীর, ৪ জন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নুরুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আমরা আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করেছি। প্রায় প্রতিদিন এক-দুজন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত জুলাই মাসে ৩৯ জন রোগী ভর্তি ছিল। চলতি মাসে ৩২ জন। তবে এখন ভর্তি আছে ৬ জন। এদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রজত শংকর রায় বিশ্বাস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত এক মাসে আমরা প্রায় একশ’র কাছাকাছি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে। এদের মধ্যে ৫ শতাংশ রোগীর অবস্থা ছিল খারাপ। এসব রোগীকে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা হয়েছে। দুজনকে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছিল। তবে কোনো রোগী মারা যায়নি।

আরও পড়ুন: হাটহাজারীতে ব্রিকফিল্ডে জুয়ায় মত্ত ৮ যুবক, ধরল পুলিশ

ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, তীব্র জ্বর; সঙ্গে মাথা, মাংসপেশী ও হাড়ে ব্যথা, বমি, চামড়ায় লাল দাগ ইত্যাদি। অনেকের জ্বর আসে, আবার চলে যায়। এরপর দুদিন পর আবার আসে। এসব রোগীর ঝুঁকি একটু বেশি। যেসব রোগীর রক্তের অনুচক্রিকা ও ব্লাডপ্রেসার কমে যায় এবং বমি বেশি হয় সেসব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছর হয়ত ডেঙ্গু আমরা মোটামুটি মোকাবেলা করতে পারছি। তবে আগামীর জন্য আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ বছর যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা যদি আগামী বছর পুনরায় আক্রান্ত হন তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মশার কামড় থেকে অবশ্যই নিজেকে বাঁচাতে হবে, বিশেষ করে দিনের বেলায়। এছাড়া মশার উৎপাদন স্থান ধ্বংস করতে হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, চলতি বছরে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০৮ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ আক্রান্ত হয় জুলাই মাসে। তবে আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি।

বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। যত রোগী আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ১ ভাগ হচ্ছে শিশু। এছাড়া নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্তের হার বেশি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম হচ্ছে জুন-জুলাই-আগস্ট। ডেঙ্গু বাড়ছে। চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টি, এটা খুব খারাপ। মাঝেমধ্যে একটু বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকছে এখানে-সেখানে, এটাও খারাপ। তবে জুলাই মাসের চেয়ে চলতি মাসে কিছুটা কমেছে ডেঙ্গু রোগী। আশা করছি আগামী মাসে (অক্টোবর) আরও কমে যাবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরে ১০৮ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে কেউ মারা যায়নি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জুলাই মাসে আক্রান্ত। আক্রান্তদের ৩ ভাগের ১ ভাগ শিশু। তবে পুরুষের চেয়ে নারীর আক্রান্তদের সংখ্যা কম। আমরা প্রতিদিনের রিপোর্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে পাঠাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগী এখন এই সময়ে এত বেশি হওয়ার কথা নয়। গতবছর এসময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কম। এবার সেই তুলনায় বেশি। তবে উপজেলায় নেই, আক্রান্ত সবাই শহরের।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

পরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. শহীদুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!