টোকেনে চলে ৩ হাজার অটোরিকশা, বাঁশখালীতে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গেও মাস্তানি

বাঁশখালীতে ‘জনতা সিএনজি অটোরিক্সা কল্যাণ বহুমুখী সমিতি লিমিটেড’ নামে অবৈধভাবে চলছে তিন হাজারেরও বেশি অটোরিকশা। এসব গাড়ির বেশিরভাগ চালকের নেই লাইসেন্স। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক, মাদকাসক্ত এবং বিভিন্ন মামলার আসামি এসব অটোরিকশা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। সমিতির নেতা ও শ্রমিকদের দাপটে অসহায় ট্রাফিক পুলিশও।

জানা গেছে, অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ থেকে অভিযান পরিচালনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু কিছু শ্রমিক নেতা, কথিত সাংবাদিক, উচ্ছৃঙ্খল যুবকের হুমকিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছে ট্রাফিক পুলিশরা।

এসবের মাঝেই গত ১০ দিনে ৩০টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ৩২টি গাড়ি। তবুও বন্ধ হয়নি অবৈধ এসব গাড়ির চলাচল। এখনও প্রকাশ্যে রাস্তা কাঁপাচ্ছে লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশাগুলো।

এদিকে অবৈধ এসব রিকশার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। রাস্তায় যানজটের অন্যতম কারণও এসব অটোরিকশা। এ কারণে বাঁশখালীর প্রধান সড়কের ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিন যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে যাত্রীসহ বিভিন্ন গাড়ির চালকদেরও।

সরেজমিন দেখা গেছে, বাঁশখালী পৌরসভায় জনতা সিএনজি অটোরিক্সা কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে অটোরিকশা চালকদের পকেটে রয়েছে সমিতির টোকেন। ট্রাফিক পুলিশ অভিযানে এলে ওই টোকেন দেখিয়ে চালকরা বলেন, এটাই গাড়ির লাইসেন্স।

এদিকে অটোরিকশা আটকের খবর পেলেই ছুটে আসেন ভুয়া শ্রমিক নেতা থেকে শুরু করে কথিত সাংবাদিকরা। এরপর তারাও গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দেন হুমকি-ধমকি।

অবৈধ এসব অটোরিকশার একাধিক চালক আলোকিত চট্টগ্রামকে জানান, সমিতির টোকেনের মেয়াদ ১ বছর। এর বিপরীতে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ফি দিতে হয়। শর্ত থাকে চলার পথে পুলিশ ঝামেলা করবে না, করলে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাইসেন্সের মতো এই টোকেন ব্যবহার করা যাবে। সমিতির পক্ষে সভাপতি আব্দুর ছবুর প্রত্যেক চালকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে আদায় করেন।

রেজাউল করিম নামে এক শ্রমিক টোকেন দেখিয়ে আলোকিত চট্টগ্রাম প্রতিনিধিকে বলেন, আমি সমিতির ৬৬৪ নম্বর সদস্য। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না। আমার ক্ষতি হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চাঁদপুর, গুনাগরী, রামদাশ হাট, বৈলছড়ি, চেচুরিয়া, মিয়ার বাজার, উপজেলা সদর, টাইম বাজার, মনছুরিয়া বাজার, চাম্বল বাজার, নাপোড়া বাজার ও প্রেম বাজার এলাকায় রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে শত শত অটোরিকশা। এতে মূল রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঢুকতে এবং চলাচলে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। দিনভর প্রবেশপথে লেগে থাকে যানজট।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাঁশখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত ১০ দিন ধরে লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে আছি। এর মধ্যে ৩০টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা এবং ৩২টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানে গেলেই সমিতির সভাপতি আব্দুর ছবুর এবং সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তিসহ আরও উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা এসে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। পুরো বাঁশখালীতে তিন হাজারের বেশি লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা চলছে টোকেনের বিনিময়ে। তাদের হুমকি-ধমকির কারণে অভিযান আপাতত বন্ধ রেখেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী পৌরসভার জনতা সিএনজি অটোরিক্সা কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর ছবুর আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অটোরিকশা শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করি। ওই টাকা আমি খাই না। শ্রমিকদের দেওয়া টোকেন লাইসেন্স নয়, ওদের সদস্য পদ। ওটা পুলিশকে দেখানোর জন্য দেওয়া হয়নি। পুলিশের আইনগত অভিযানে আমরা কোনো বাধা দিচ্ছি না। এছাড়া পুলিশকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!