জামালখানে নান্দনিকতার আড়ালে ‘মরণফাঁদ’

চট্টগ্রাম নগরের নান্দনিক ওয়ার্ডখ্যাত জামালখান এলাকায় নান্দনিকতার আড়ালে তৈরি হয়েছে ‘মরণফাঁদ’।

জামালখান মোড়ের সেন্ট মেরিস স্কুলের পাশে ক্যাথলিক চার্চের সীমানা দেয়ালের ওপরের একাংশ ভেঙে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে স্কুলে প্রবেশমুখের একটি দেয়ালও খুঁটি দিয়ে কোনোরকমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। দেয়ালগুলোর পাশঘেঁষা ফুটপাত ও রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকসহ অসংখ্য পথচারী। এ অবস্থায় দেয়াল ভেঙে যেকোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

মঙ্গলবার (৭ জুন) সরেজমিন দেখা যায়, জামালখান মোড়ে অবস্থিত সেন্ট মেরিস স্কুলের প্রবেশমুখে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের গেট। স্কুল ও পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের যাতায়াতের রাস্তাটির এক পাশের দেয়াল নড়বড়ে হওয়ায় খুঁটির সাহায্যে দাঁড় করে রাখা হয়েছে। একটি পরিত্যক্ত প্লট সুরক্ষিত রাখতে সংস্কার ছাড়াই দেয়ালটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে রেখে দিয়েছে ক্লিপটন গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের গেট সংলগ্ন দেয়ালটির পাশ দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করছে সেন্ট মেরিস স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যেকোনো সময় দেয়ালটি ধসে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম মেডিকেলে ইন্টার্ন ডাক্তারদের তাণ্ডব—ওয়ার্ডবয়কে মারধর, অন্তঃসত্ত্বা নার্সকে ধাক্কা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেন্ট মেরিস স্কুলের এক শিক্ষক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অনেকদিন ধরে ক্লিপটন গ্রুপের এই সীমানা দেয়ালটি এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। একটা ইট-সিমেন্টের দেয়াল কীভাবে খুঁটির সাহায্যে এতদিন ধরে ঠেস দিয়ে রেখে দিতে পারে বুঝি না। এর পাশ দিয়ে আমাদের ছোট ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত চলাচল করছে। আমরা নিয়মিত আসা-যাওয়া করি। যেকোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে। স্কুলে আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার আলাপ হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও এটার কোনো সমাধান হয়নি। আমরা চাই দ্রুত এই দেয়াল অপসারণ হোক।

এদিকে সেন্ট মেরিস স্কুলের পাশে ক্যাথলিক চার্চের একটি সীমানা দেয়ালও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জামালখান মোড় থেকে চকবাজার অভিমুখে চার্চের গেট থেকে চিটাগং আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত বিস্তৃত দেয়ালটি ঘেঁষে রয়েছে পথচারী চলাচলের জন্য ফুটপাত। এই ফুটপাত দিয়ে নিয়মিত চলাচল করছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকসহ অসংখ্য মানুষ। কিন্তু তাদের অনেকের অজান্তেই ‘যমদূত’ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সীমানা দেয়ালটি। বঙ্গবন্ধুসহ বেশ কয়েকজন ঐতিহাসিক ও গুণীব্যক্তির উক্তি এবং ছবি সম্বলিত বিশাল এই দেয়ালটির একপাশে পিলারের ওপরের অংশ ভেঙে গেছে। ভাঙা অংশসহ বিভিন্ন জায়গায় ফাটল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেয়ালটি। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

এছাড়া অধিকাংশ অংশজুড়ে ফাটল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই সীমানা দেয়ালটি পাহাড়ি জায়গাতে হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত মাটির চাপের কারণেও ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

পথচারী নুরুল আমিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালটি অনেকদিন ধরেই সংস্কার ছাড়া এভাবে পড়ে আছে। এর সঙ্গে লাগানো ফুটপাত থাকায় এটি আরও বিপজ্জনক হয়ে গেছে। দেয়ালটির উচ্চতাও অন্যান্য স্বাভাবিক বাউন্ডারি দেয়ালের চেয়ে বেশি। তাই কোনো কারণে যদি এটি ধসে পড়ে তাহলে ফুটপাতে মানুষসহ রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনে আঘাত করবে, যা ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। দ্রুত এই ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালের সংস্কার করা দরকার।

আরও পড়ুন: বিস্ফোরণে আহতদের নগদ টাকা—ওষুধ দিলেন সালসাবিল চেয়ারম্যান

ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালটির একপাশে রয়েছে চিটাগং আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। অন্য পাশে রয়েছে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকরা নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে ঝুঁকিতে থাকা দেয়ালটির সঙ্গে লাগোয়া ফুটপাত দিয়ে। তাই দেয়ালটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। আমি এখনই জায়গাটিতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আসব। যদি এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে তাহলে যাদের দেয়াল তাদেরকে এগুলো ভেঙে সংস্কার করতে বলবো। আমি কালকের মধ্যেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে চলতি বছর সীমানা দেয়াল ধসে বেশ কয়েকটি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গত ৩১ মে নগরের আকবরশাহ থানার উত্তর কাট্টলীতে দেয়াল ধসে মারা যায় এক শিশু। এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। এর আগে গত ২ এপ্রিল আগ্রাবাদের চৌমুহনীতে রাস্তায় সীমানা দেয়াল ধসে পড়ে শিশু-বৃদ্ধাসহ আহত হয়েছিলেন ছয়জন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!