চট্টগ্রামে পাহাড়ধস—যেভাবে বেঁচে গেল জমজ শিশু

নার্গিস বেগমের ঘরে মানুষের ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে সামনে যেতেই দেখা গেল— সাদা পোশাকে সাত মাস বয়সী যমজ দুবোন তাসকিয়া ইসলাম তানহা ও তাকিয়া ইয়াসমিন তিন্নি তাকাচ্ছে এদিক-ওদিক। এসময় চেনা-অচেনা অনেকেই কোলে নিচ্ছে তাদের। মাঝে মাঝে দুবোনের মুচকি হাসি ভরিয়ে তুলছে সবার মন।

অবুঝ তানহা-তিন্নি বুঝতে পারছে না আজ তাদের জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন। আজ যে তাদের বুকে আগলে রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন মা!

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে আবার পাহাড়ধস—এবার কাড়ল ৪ প্রাণ, মা মরলেও বেঁচে গেল কোলের শিশু!

দুশিশুর চার বছরের বড় ভাই তরিফুল ইসলাম তামিমও বুঝতে পারছে না কী হয়েছে। সেও জানে না তার মা আর বেঁচে নেই।

অশ্রুসিক্ত বড় খালা নার্গিস বেগম বলেন, মানা করার পরও বৃষ্টির মধ্যে তারা সেই বাড়িতে ছিল। রাতে চলে আসতে বললেও কথা শোনেনি। অন্য সময় হালকা বৃষ্টি হলেও আমাদের ঘরে এসে থাকত।

শুক্রবার (১৭ জুন) মধ্যরাত ছিল তানহা, তিন্নির ও তরিফুলের জীবনের কাল রাত। টানা বৃষ্টির কারণে মধ্যরাতে নগরের আকবরশাহ পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনি ১ নম্বর ঝিল এলাকায় তাদের সেমিপাকা ঘর চাপা পড়ে পাহাড়ধসের মাটিতে। এসময় মাটির নিচে চাপা পড়ে তানহা-তিন্নির মা শাহিনুর বেগম, খালা মাহিনুর বেগম, নানা ফজলুল হক ও নানী মোশারা বেগম।

মাটিচাপায় শাহিনুর মারা গেছেন। কিন্তু বেঁচে আছেন তানহা-তিন্নি! মা মারা যাওয়ার পরও দুশিশুর বেঁচে থাকাটা সবার কাছে যেন বিস্ময়ের। অবশ্য সেই বিস্ময় খোলাসা করেছেন রাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসারা।

তারা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শাহীনূর পাহাড়ধসের মাটিচাপায় মারা যাওয়ার পরও তার অবুঝ দুসন্তান বেঁচে গেছে। কারণ যখন পাহাড়ধসে তাদের ঘর মাটিচাপা পড়ে তখন শিশু তানহা-তিন্নি ছিল মায়ের বুকের ভেতর।তাই তারা বেঁচে গেছে। তবে তানহার কপালে সামান্য আঘাত লেগেছিল।

সরেজমিন দেখা গেছে, চাপা পড়া ঘরের রঙিন টিনগুলো দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে। পাশে পড়ে রয়েছে তানহা-তিন্নির দুধের কৌটা। মাটির কিছু কিছু অংশে চাপা পড়েছে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র।

এসময় কথা হয় তানহা-তিন্নির মামা সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে বোনের স্বামী জয়নাল আবেদিন ও বড় ভাগ্নে তামিম ছিল বড় বোন নার্গিস বেগমের বাসায়। তানহা-তিন্নির মাকে বলা হয়েছে বড় বোনের বাসায় চলে যেতে। কিন্তু তারা বাসায় থেকে যায়। রাত ১টার দিকে হঠাৎ খবর আসে পাহাড় ধসের। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বোনের ঘর মাটির নিচে চাপা পড়েছে। পাশের বাড়ির লোকজন তানহা-তিন্নিকে উদ্ধার করে। আমার বাবা-মা পাশে পড়ে ছিল। কিন্তু বোনদের দেখা মিলেনি।

আরও পড়ুন::শিশু খুন—বিরোধের ছুরি ঢুকল অবুঝ শিশুর গলায় পেটে

পরে ফায়ার সার্ভিস এসে বোনদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় ডাক্তার জানান, তানহা-তিন্নি মা বেঁচে নেই। একইসঙ্গে সদ্য বাগদান হওয়া ছোট বোন মাহিনুর বেগম, বাবা-মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা কিছুটা আশঙ্কামুক্ত বলে জানান চিকিৎসক।

এদিকে তানহা-তিন্নির মা ও খালার মরদেহ দেখতে মানুষের ঢল নামে এলাকায়। সবার চিন্তা-ভাবনায় শুধু এখন তানহা-তিন্নি। কী করে থাকবে মা হারা এই অবুঝ শিশুরা— এই প্রশ্নই এখন সবার মনে।

এএইচ/আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!