চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন করেছি, আরও হবে : পলোগ্রাউন্ডের জনস্রোতে প্রধানমন্ত্রী

আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি উপস্থিত সবাইকে হাত তুলে অঙ্গীকার করান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার পর তারা ক্ষমতায় গিয়েছিল। এমনকি যে জয় বাংলা স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধারা বুকের রক্ত দিয়েছে, সেই জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করেছিল খালেদা জিয়া সরকার জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ, সেই জয় বাংলা স্লোগান ফিরে এসেছে এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা পেয়েছে।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) নগরের ঐতিহাসিক রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত এই চট্টগ্রামের অসংখ্য জায়গায় হামলা চালিয়েছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কেউ তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। তারা এদেশে বোমাবাজি, অগ্নি সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণতন্ত্র হরণ করতে চেয়েছিল। চুরি, লুটপাটসহ তারা জনগণের অধিকার হরণ করেছে। অগ্নি সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যার জবাব একদিন খালেদা-তারেক জিয়াকে দিতে হবে। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন করেছি। আগামীতে আরও উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দিবে না। তারা আশা করে এমন কিছু আসুক যারা একেবারে নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, ইলেকশনের পরিবর্তে সরকার উৎখাত করবে। তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না। জিয়াউর রহমান যেভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল, বিএনপির ধারণা তারা সেভাবেই ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা তাদের পছন্দ না।

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের আলটিমেটাম ও ভোট চুরির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ। এদিন হানাদার বাহিনীর পদলেহনের দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা দখল করে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে চায়। আমি তাদের বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। তাই তাকে দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। আমরা জনতার মঞ্চ করেছিলাম, সারাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। দেড় মাসও তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি, পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। বিএনপির মনে রাখা উচিত জনগণের ভোট যদি কেউ চুরি করে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না।

আরও পড়ুন : অনারা ক্যান আছন, বেগগুন গম আছননি—বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রিজার্ভ ও ব্যাংকে অর্থ সংকটের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আমি। আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধেই অপপ্রচার করা হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নেই বলে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব। এই কয়েকদিনে যারা ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়েছেন তারা সকলেই টাকা তুলতে পেরেছে। গুজবে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে টাকা তুলে ঘরে আনে, সেই টাকা চোরেও নিয়ে যেতে পারে তাই আবার তা নিয়ে ব্যাংকে জমা করে। এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বিএনপি। এটাই বিএনপি-জামায়াতের কাজ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব, আমির খসরু সাহেব, নোমান সাহেব এসে দেখে যান আপনাদের ৮টা সমাবেশের লোক এখানে একটা সমাবেশে হয়েছে। বীর চট্টগ্রাম প্রস্তুত, সারা চট্টগ্রামজুড়ে মিছিল আর মিছিল। এবার খেলা হবে, ডিসেম্বরে খেলা হবে। সংবিধান সংশোধনের দিবাস্বপ্ন দেখেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলেন।

সভাপতির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি চট্টগ্রাম এসেছেন, আপনাকে কী দিয়ে বরণ করে নিব আমার জানা নেই, কোনো কিছুতেই তা পরিপূর্ণ হবে না। আপনি এসেছেন তাই পুরো চট্টগ্রামের মানুষ আজ অনেক খুশি। শেখ হাসিনা দেশে যে উন্নয়ন করেছেন তা আর কোনো সরকার করতে পারেনি।

এর আগে বেলা ১২টায় শুরু হওয়া জনসভার শুরুতে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা। জনসভার মঞ্চ তৈরি করা হয় ৮৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৬০ মিটার লম্বা নৌকার আদলে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ।

এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

জেএন/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!