চেয়ারম্যানের দাপট—আদালতকেও বুড়ো আঙুল, খুনের হুমকি ধর্ষক ছেলের

বাঁশখালীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধপূর্ণ জায়গা থেকে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পুকুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে বুধবার (১ মার্চ) বেলা ১২টা পর্যন্ত এসকেভেটর দিয়ে মাটি কাটেন চেয়ারম্যানের লোকজন। ওই দিনের দুটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে আলোকিত চট্টগ্রামের কাছে।

জানা গেছে, পুকুরিয়া ইউনিয়নের চর জুঁইদন্ডী এলাকার ১৬৮ দশমিক ২২ শতাংশ নাল জমি নিয়ে চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনের সঙ্গে নগরের ইপিজেড এলাকার হাজী মোহাম্মদ সৈয়দ নুরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন গায়ের জোরে লোকজন দিয়ে মাটি কাটছেন।

যোগাযোগ করা হলে মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন বলেন, জায়গাটির মালিক আমি। মামলার বাদী জায়গাটি দখলের পাঁয়তারা করছেন। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি প্রতিবেদককে তাঁর সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী হাজী মোহাম্মদ সৈয়দ নুর বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিএস রেকর্ডসহ মালিকের ওয়ারিশদের কাছ থেকে এসব জায়গা বৈধভাবে ক্রয় করি। পরে আমার নামে বিএস নামজারি ১৭৯ ও ১৮২ নং খতিয়ান করে সরকারকে খাজনা দিয়ে ভোগদখল করে আসছি।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে শিশু ধর্ষণ—চেয়ারম্যানের ছেলের বিরুদ্ধে মামলা

তিনি বলেন, পুকুরিয়া চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন তার সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে আমার জায়গা দখল ও মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার হুমকি দিয়ে আসছিল। এরপর আমি আদালতের শরণাপন্ন হই। গত সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আদালত ওই জায়গায় স্থিতাবস্থা জারি করেন। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাঁশখালী রামদাশ মুন্সিরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জ্ঞানময় চাকমা স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে বিবাদী চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনকে বিষয়টি জানানো হয়।

তিনি আরও বলেন, নোটিশ পাওয়ার পরও তিনি আদালতের আদেশ অমান্য করে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত এসকেভেটর দিয়ে বিরোধপূর্ণ জায়গার মাটি কেটে নিয়ে যান। পরে বিষয়টি আমি থানা পুলিশকে জানাই।

স্থানীয়রা জানায়, পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। এলাকায় দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও নিরীহদের ওপর জোর খাটানো তার রুটিন কাজ। তিনি কোথাও এক গণ্ডা জায়গা ক্রয় করে তার আশপাশের আরও কয়েক গণ্ড জায়গা দখল করে নেন। এখানে তার কথায় শেষ কথা। কেউ তার কথার বাইরে গেলে মামলা-হামলা করে তাকে এলাকা ছাড়া করা হয়। তার ছেলে ১৩ বছরের গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করলেও চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনের কাছে বিচার পায়নি ভিকটিমের পরিবার। প্রায় এক বছর পরে আদালতের দ্বারস্থ হয় ভুক্তভোগীর পরিবার।

এদিকে গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনের ছেলে মো. নিজাম উদ্দিন ওরফে নেজামের বিরুদ্ধে ১৩ বছরের কাজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা করেন কিশোরীর মা।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, অনাহারে জীবনযাপন করার কারণে চার বছর আগে কৃষক বাবা ৯ বছর বয়সী চম্পাকে (ছদ্মনাম) পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসহাব উদ্দীনের বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজ করতে দেন। ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল (২২ রমজান) রাত ১১টার দিকে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ঝাড়ু দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই শিশুকে ধর্ষণ করেন চেয়ারম্যানের ছেলে নিজাম। এ ঘটনা কাউকে জানালে জানে মেরে ফেলার হুমকিসহ শিশুর মা-বাবাকে সন্ত্রাস লেলিয়ে দিয়ে লাশ গুম করে ফেলারও হুমকি দেয় নিজাম।

প্রাণভয়ে নিশ্চুপ থাকা শিশুটি সেই বছরের ঈদের পরদিন চেয়ারম্যানের ঘর থেকে তার ভাবীর বাসায় পালিয়ে যায়। ওই ঘটনা শিশুর পরিবারে জানাজানি হলে তার মা অভিযুক্তকে ফোন করে ধর্ষণের বিষয়টি জানতে চান। এসময় নিজাম হুমকি দিয়ে বলেন— আমি চেয়ারম্যানের ছেলে, যদি এই ধর্ষণের বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করিস তোর মেয়েকে গুম করে ফেলব। তোদেরকে ভিটাবাড়ি ছাড়া করব। থানা পুলিশ আমার কিছুই করতে পারবে না।

এদিকে এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে বিচার দিলে তিনি বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে আজ-কাল-পরশু করে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে তারা বাধ্য হয়ে প্রায় এক বছর পর আদালতে ধর্ষণ মামলা করেন।

এ বিষয়ে বাঁশখালী রামদাশ মুন্সিরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) জ্ঞানময় চাকমা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আজ (বুধবার) দুপুরে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এসকেভেটরের ব্যাটারি আমরা নিয়ে এসেছি। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উভয় পক্ষকে সতর্ক করেছি।

যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিষয়টি আমি জ্ঞাত আছি। ওই জায়গায় কেউ আদালতের আদেশ অমান্য করে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনইউএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!