চট্টগ্রামে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে জিপ চাপা দিল ৩ স্কুলছাত্রীকে, নিহত ২

ফটিকছড়িতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে বেপরোয়া জিপ চাপা দিয়েছে তিন স্কুলছাত্রীকে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অপরজন রয়েছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে ফটিকছড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফেলাগাজী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো- মিশু আক্তার (১৮) ও নিশামনি (১৭)।  তারা দুজনই ফটিকছড়ি হাইদচকিয়া বহুমুখীউচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। মিশু দক্ষিণ পাইন্দংয়ের আকতারের বাড়ির আবুল বশরের মেয়ে। নিশামনিও একই এলাকার মো. লোকমানের মেয়ে। তারা স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিল।

এদিকে ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা জিপটি আটক করে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে দেয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা ট্রাফিক পরিদর্শক নিখিল বিকাশ চাকমাসহ অন্য এক পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: খুন করার চক্রান্ত—গরম লোহার ছেঁকা আর বালিশচাপা দেওয়া হয়েছিল স্কুলছাত্রীকে

বিক্ষুব্ধ জনতা দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশের অনুরোধে তারা অবরোধ তুলে নেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিনুল হাসান ও ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশ্যে ইউএনও বলেন, আমাদের সবার আপনজন আছে। আজ যে বোনরা মারা গেছে তাদের পরিবারের কষ্ট আমরা অনুভব করছি। এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে বসে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

স্থানীয়রা জানান, ফেলাগাজীর দীঘির মোড়ে রাস্তায় চেকপোস্ট বসায় ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) ও সার্জেন্ট জিপটিকে থামার সংকেত দেয়। কিন্তু জিপটি গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে গাড়িটি উল্টে তিন স্কুলছাত্রীকে চাপা দেয়।

এরপর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে। উত্তেজিত জনতা দুই পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছিত একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে। একপর্যায়ে জেলা হাইওয়ে পুলিশের মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয় তারা।

আরও পড়ুন: বারৈয়ারহাটে থেঁতলে গেছে ফটিকছড়ির ১১ সন্তানের জননী

ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডা. নাবিল চৌধুরী বলেন, ধানের বস্তাবোঝাই একটি জিপ ভূজপুর থেকে ফটিকছড়ির দিকে আসছিল। পুলিশের সংকেত পেয়ে দ্রুত পালাতে গিয়ে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে তিন স্কুলছাত্রীকে চাপা দেয়। সকালে স্কুলে আসাইনমেন্ট জমা দিয়ে ছাত্রীরা বাড়ি ফিরছিল। তিনজনকে হাসপাতালে আনা হলে মিশু আক্তার ও নিশা মনিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ফটিকছড়ি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজমগীর বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। আমরা এখন হাসপাতালে এসেছি। ঘাতক গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে। তবে চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। আমরা লাশ উদ্ধার করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য পাঠিয়েছি। মামলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!