চসিক ‘কাউন্সিলরের কাণ্ড’ নিবন্ধন সহকারীকে মারধর—বদলি, বন্ধ দক্ষিণ হালিশহরে জন্মনিবন্ধন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্য হালিশহর ওয়ার্ডে সেবাগ্রহীতারা গত তিন মাস ধরে জন্মনিবন্ধন সেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরপর দুজন জন্ম নিবন্ধন সহকারীকে কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীর মারধর এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পদটি শূন্য থাকায় এ ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাবে অভিযুক্ত কাউন্সিলরের দাবি, এমন কোনো ঘটনাই ঘটোনি। এটি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ।

সেবাগ্রহীতা বাঁশখালীর শিল্পী রাণী দাশ বলেন, ‘আমি ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। আমার মেয়ে তিশার জন্য তিন মাস আগেই জন্মনিবন্ধনের আবেদন করেছি। বারবার সময় দেওয়া হলেও এখনও জন্ম নিবন্ধন পাইনি। এ পর্যন্ত ওয়ার্ড অফিসে পাঁচবার এসেছি।’

ভুক্তভোগী জাফরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাউজান থেকে এসেছি। চাকরির কারণে ওয়ার্ডে থাকাকালে ছেলে মোমিনুল ও মেয়ে জান্নাতুলের নামে জন্মনিবন্ধন করেছিলাম। সেখানে একটি ভুল হওয়ায় এখন রাউজান থেকে এসেছি সংশোধন করতে।’

স্থানীয়রা জানান, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী ছিলেন হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তিনি থাকাকালে দীর্ঘ ১২ বছর সেবাগ্রহীতারা কোনো ভোগান্তির শিকার হননি। কিন্তু কোনো এক কারণে তাকে স্থানান্তর করেন কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী। পরে মনোজ কুমার বিশ্বাস নামে আরেকজন এলে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ। কাউন্সিলরের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে এখন ওয়ার্ডের ৮৯ হাজার ভোটারসহ ভাসমান ছয় লাখ মানুষ জন্মনিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৩ জুলাই দেশে জন্মনিবন্ধন আইন কার্যকর হয়। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে ২০১০ সাল থেকে অনলাইন জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সহকারী হিসেবে হাবিবুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন থেকে প্রায় সাড়ে ১২ বছর ওয়ার্ডটিতে জন্ম নিবন্ধন সহকারী হিসেবে সেবা দিয়ে আসছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতাদের কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু অদৃশ্য কারণে হঠাৎ কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। একপর্যায়ে তাঁকে ওয়ার্ড অফিসের নিবন্ধন সহকারীর পদ থেকে সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনের কাছে চিঠি দেন কাউন্সিলর।

আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত সমাবেশের নামে ‘নাশকতা’ করলে রাজপথেই জবাব—আ জ ম নাছির

পরে কাউন্সিলরের অনুরোধে গত ২৪ মে হাবিবুর রহমানকে সরিয়ে মনোজ কুমার বিশ্বাস নামে আরেকজনকে ওয়ার্ডটিতে জন্মনিবন্ধন সহকারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গেও একই আচারণ করেন কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী। কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মারধর ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেন মনোজ কুমার বিশ্বাস। এ নিয়ে মেয়র বরাবর একটি অভিযোগপত্রও জমা দেন তিনি।

সাবেক জন্মনিবন্ধন সহকারী হাবিবুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতাদের কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু কোন অভিযোগে কাউন্সিলর আমাকে স্থানন্তর করেছেন তা আমি এখনও জানি না। বর্তমান আমি সিটি করপোরেশনের সংস্থাপন শাখায় কর্মরত আছি।’

৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান নিবন্ধন সহকারী মনোজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি কম্পিউটারের কাজ জানি। এ হিসেবে আমাকে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সহকারী হিসেবে পাঠানো হয়। সেখানে মাত্র ১০ দিন ডিউটি করেছি। এরমধ্যেই কাউন্সিলর আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। আমি মেয়রকে অভিযোগ দিয়েছি। দেখা যাক, আমার ওপর সুবিচার করা হয় কিনা।’

যোগাাযোগ করা হলে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জন্মনিবন্ধন দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে তা আবার চালু করা হবে।

নিবন্ধন সহকারীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কাউকে মারধর এবং কারও সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করিনি। মনোজ কুমার বিশ্বাস আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে বলে শুনেছি। তবে এখনও আমাকে কেউ কিছু বলেনি।

এ বিষয়ে জানতে মেয়র রেজাউল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!