চট্টগ্রাম মেডিকেলে ‘মাস’ পেরুলেই চিকিৎসা মেলে হাড়ভাঙার

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভোগান্তির আরেক নাম অর্থো সার্জারি ওয়ার্ড। এখানে অপারেশনের জন্য রোগীদের ফেলে রাখা হয় মাসের পর মাস। আবার অনেক রোগীর অপারেশনের দিনক্ষণ ঠিক করে অভুক্ত রাখার পরও তা বাতিল হয়ে যায়!

এ নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন অসহায় এক বাবা। যিনি নিজের সন্তানকে দীর্ঘ ২৮ দিন অর্থো সার্জারি ওয়ার্ডে রেখেও অপারেশন করাতে পারেননি।

জানা যায়, ৪ বছরের শিশু তরিকুল ইসলাম খেলতে গিয়ে পা ভেঙে ফেলে। পরে নগরের ন্যাশনাল হাসপাতালে লাখ টাকা খরচ করে পায়ে রড বসানো হয়। কিন্তু সেই রড খুলতে আবার প্রয়োজন পড়ে মোটা অঙ্কের টাকা৷

বড় অঙ্কের টাকা থেকে বাঁচতে শিশুর বাবা নুরুল ইসলাম নুরুউদ্দিন সিদ্ধান্ত নেন সন্তানকে চমেক হাসপাতালে নেওয়ার। গত ২১ সেপ্টেম্বর শিশু তরিকুলকে ভর্তি করা হয় ২৬ নং অর্থো সার্জারি ওয়ার্ডে। দীর্ঘ ২৮ দিন পর তার অপারেশনের সিরিয়াল আসে। কিন্তু এর পরও অপারেশন করানো ছাড়াই সন্তান নিয়ে ফিরতে হয়েছে বাবাকে।

কারণটা শোনা যাক তরিকুলের বাবা নুরুল ইসলাম নুরুউদ্দিনের কাছেই। নুরুউদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ভোগান্তির শেষ নেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় এক মাস ধরে ছেলের অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছি। রিপোর্ট নেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি পদে পদে ভোগান্তি। এতকিছুর পরও আমার ছেলের অপারেশন করাতে পারিনি।

তিনি বলেন, গত সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৮টায় ছেলের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। সেজন্য রাত ১২টা থেকে আমার ছেলেকে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। ১৮ অক্টোবর সকাল ৮টায় অপারেশন হওয়ার কথা থাকলেও পরে বলা হয় অপারেশন হবে দুপুর ২টায়৷ কিন্তু ২টায় চিকিৎসক এসে বলেন, ‘আপনার ছেলের অপারেশন আজ সম্ভব না।’ এ কথা শুনে এক সেকেন্ডও দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে চলে আসি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চমেক হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের। নির্দিষ্ট সময়ে হয় না কোনো সার্জারি। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও অনেক রোগী করাতে পারছেন না সার্জারি। এমনও রোগী আছে যাদের সার্জারির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে মাসের পর মাস। এ ভোগান্তি সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

ভোগান্তির কারণ জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের ২৬ নং অর্থো সার্জারি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আবদুর রব ফয়সাল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের এখানে অসংখ্য রোগী। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি হয়। অথচ আমরা প্রতিদিন অপারেশন করতে পারি পাঁচ থেকে ছয়টা৷ সেজন্য কারো কারো অপারেশন সিরিয়াল পেতে দেড়-দুমাস লেগে যায়। লম্বা সিরিয়ালের কারণে কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে চলে যায়।

নুরুল ইসলাম নুরুউদ্দিনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেদিন ওনার (নুরুল) সন্তানসহ ৬ জন রোগীকে আমরা অপারেশনের জন্য রেখেছিলাম। প্রথমে তিনজন রোগীকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই তিন রোগীর অপারেশন শেষ করতেই আড়াইটার বেশি বেজে যায়। যেহেতু ৩টার পর আমাদের রুটিন ওটি কার্যক্রম বন্ধ তাই সেদিন অপারেশন করা সম্ভব হয়নি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!