চট্টগ্রামে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। অভিযানে ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতিসহ ১৫২ জন মানুষের অর্থসংস্থান নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
রোববার (১৯ মার্চ) নগরের কাজির দেউড়ি এলাকায় এ উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মং।
উচ্ছেদ অভিযান শেষে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সার্কিট হাউজের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) থেকে পাঠানো নোটিশে জানানো হয় লিজ নিয়ে গড়ে তোলা গার্ডেন রেস্টুরেন্ট ‘বাগান বিলাস’ উচ্ছেদ করা হবে। এজন্য চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সকল স্থাপনা ও মালামাল সরিয়ে নিতে নোটিশে জানানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই আজ (রোববার) হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। এসময় স্থাপনা ও মালামাল সরানোর কোনোরকম সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলেন, সিজেকেএস ৩১ মার্চ পর্যন্ত মালামাল সরিয়ে উচ্ছেদ করার সময় নির্ধারণ করলেও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মং এসে বাগান বিলাসসহ পুরো প্রকল্প উচ্ছেদ অভিযানের জন্য তোড়জোড় শুরু করেন। এসময় জাতীয় সেবা ৯৯৯-এ জানালে তারা জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করতে বলেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামানের মুঠোফোনে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর পুলিশ কমিশনারকে ফোন করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে দখলদারদের কবল থেকে ৫ সরকারি বাড়ি মুক্ত করল জেলা প্রশাসন
দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ করে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলেন, পরে আবারও ৯৯৯ এ ফোন করা হলে তারা স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করতে বলেন। তাদের নির্দেশে নগরের কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোন করা হলে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে যেতে বলেন। এরপর আবারও ৯৯৯ এ ফোন কল করা হলে তারা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইতে বলেন। পরে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিউসন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ডিজাইনার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর লায়ন এমএ হোসেন বাদল বলেন, পুরো প্রকল্পের উপর উচ্চ আদালতে রিট করলে মহামান্য হাইকোর্ট গত ১৬ মার্চ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র আমরা রিসিভ করাতে গেলে জেলা প্রশাসন কার্যালয় তা গ্রহণ করেনি। এরপর সকল কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের ইমেল এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরও সদুত্তর দেননি জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, উচ্ছেদ চলাকালীন সময়ে আমি ম্যাজিস্ট্রেটকে সিজেকেএসের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠিতে আমাদের আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলার বিষয়টি জানায়। একইসঙ্গে আমি এ সংক্রান্ত মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়টি তুলে ধরি এবং ১৬ মার্চের মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশটি দেখাই। তখন ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মং বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে এসেছি। আপনারা উনাকে জানান।’ এসময় উপস্থিত কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জানতে চাইলে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, বেশি কথা বললে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এরপর আমি মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ নিয়ে ডিসি অফিসে ছুটে যাই। তবে উনি কোনো সদুত্তর দেননি। তড়িঘড়ি করে আমার স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করা হয়। সবমিলিয়ে আমাদের প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেকার হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ১৫২ জন কর্মচারী।
লায়ন বাদল বলেন, গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিতে আসা কর্মী জহিরের পরিবারকে বিনামূল্যে একটি নার্সারি করে দিয়েছিলাম। সেটিও আজ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে পত্রিকায় টেন্ডার দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। কিন্তু টেন্ডার না পাওয়ায় নভেম্বরে রিটেন্ডার দেয় চসিক। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিকিউরিটি মানি জমা দিয়ে মাস্টার প্ল্যানের আওতায় চসিক থেকে কাজির দেউড়ি এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় জায়গাটি লিজ নেন ফিউসন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ডিজাইনার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর লায়ন এমএ হোসেন বাদল। কিন্তু এর মধ্যে করোনাকালে ব্যবসায়ীদের ২ বছর ক্ষয়ক্ষতিতে পার করতে হয়। করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই সেই জায়গায় উচ্ছেদ চালাল জেলা প্রশাসন।