চট্টগ্রাম ছাড়তে চান না রেলের টিকিট ‘কালোবাজারি’র ১৮ বুকিং সহকারী

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১৮ জন বুকিং সহকারীকে একসঙ্গে বদলি করা হয়েছে। তারমধ্যে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ৮ জন রয়েছেন। বদলি হওয়া অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে টিকিট কলোবাজারির অভিযোগ। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রশাসনিক স্বার্থে এই গণবদলি।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তা মীর মু. আলীর দপ্তারাদেশে এই বদলি করা হয়।

জানা গেছে, টিকিট কালোবাজারি রোধে এই হঠাৎ গণবদলি। তবে বদলির দপ্তারাদেশে প্রশাসনিক স্বার্থে বলে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে সারাবছর টিকিট কালোবাজারি হয়। তবে চলতি বছর ঈদুল আজহার সময় টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। এরপর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে একাধিক টিকিট কালোবাজারি আটক হয়।

তবে ৩ জুলাই র‍্যাবের হাতে টিকিট কালোবাজারীর সময় হাতেনাতে খোদ দুই আরএনবি (রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী) সদস্য আটক হয়। এরপর রেলস্টেশন থেকে টিকিট কালোবাজারিতে বুকিং সহকারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। কেননা বুকিং সহকারীরা টিকিট বাইরে না দিলে কখনো কালোবাজারি সম্ভব নয়। এছাড়া টিকিট কালোবাজারিতে স্টেশন মাস্টার, টিকিট বুকিং সহকারী, আরএনবিসহ রেলওয়ে পুলিশের নামও উঠে আসে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকিট কালোবাজারীর বিরুদ্ধে আন্দোলন, সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি রোধে বুকিং সহকারীদের বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে বদলির পরও মো. হাসিবুর রহমান নামের এক বুকিং সহকারী চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে যাননি। তিনি বদলি ঠেকাতে তদবির করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।

দপ্তারাদেশ মতে, মো. জসিম উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে হাটহাজারীর চারিয়া মাদ্রাসা, মো. সাদিকুর রহমানকে চারিয়া মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে । মো. জমির উদ্দিনকে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বদলি করা হয়েছে। প্রেষণে কুমিল্লা থাকা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ী করা হয়েছে। সঞ্জয় কুমার কীর্তনীয়াকে কুমিল্লা থেকে ফেনী, মো. মনির হোসেনকে চট্টগ্রাম থেকে লাকসামে বদলি করা হয়েছে।

মো. মিজানুর রহমান চৌধুরীকে চট্টগ্রাম থেকে খানমোহন বদলি করা হয়েছে। এছাড়া তমাল বড়ুয়াকে খান মোহন থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বদলি করা হয়েছে। মো. ওমর ফারুককে (২) চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, মো. নাজিম উদ্দিনকে ফেনী থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। মো. জাকির হোসেনকে চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম, মো. শাকিলকে লাকসাম থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। আবু ওবায়েদ হিরুকে চট্টগ্রাম থেকে বেঙ্গুরা, আরাফাত ইকবালকে বেঙ্গুরা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। আরাফাত ইকবালকে বেঙ্গুরা থেকে চট্টগ্রাম, গোপীনাথ মজুমদারকে খানহাট থেকে চট্টগ্রাম বদলি করা হয়েছে।

অন্যদিকে মো. রাশেদুল আনোয়ারকে চৌমুহনী থেকে প্রেষণে কসবা, রহিম বাদশাকে সোনাইমুড়ী থেকে প্রেষণে কসবা বদলি করা হয়েছে ।

তবে সবচেয়ে বেশি বুকিং সহকারী বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে বদলি হওয়া ৮ জনের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ। এরমধ্যে জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। তাঁকে একাধিকবার বিভিন্ন স্টেশনে বদলি করা হলেও তিনি ঘুরেফিরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে চলে আসেন।

মো. হাসিবুর রহমানকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে নোয়াখালী বদলি করা হলেও তিনি এখনো চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আছেন বহালতবিয়তে। তিনি নাকি চট্টগ্রাম রেল দস্টেশন ছেড়ে কোথাও যাবেন না। বদলি ঠেকাতে তিনি তদবির করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারিসহ হেড বুকিং ক্লার্ক দেলোয়ার হোসেনের চাঁদা সংগ্রহকারী বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া মো. মনির হোসেন, মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবু ওবায়েদ হিরু, মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!