চট্টগ্রামে সমুদ্রসৈকত পতেঙ্গার বুকে সিত্রাংয়ের কোপ, চুরমার ওয়াকওয়ে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস আর পানির ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সৈকতের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে অবকাঠামোসহ ওয়াকওয়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনে তৈরি করা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে করা অবকাঠামো। এরমধ্যে ভেঙে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে সমুদ্রের তীরে হাঁটার জন্য নির্মাণ করা ওয়াকওয়ে।

শুধু তাই নয়, ভেঙে গেছে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা বাহারি রঙের ছোট ছোট পাথর ও চেয়ার। এছাড়া সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনে জন্য ওয়াকওয়ের পাশে রোপণ করা ঝাউগাছও ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে জলোচ্ছ্বাস ও তীব্র হাওয়ায় হেলে পড়েছে সৈকতের সড়কবাতিগুলো। সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে সড়কবাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ঢেউয়ের আঘাতে ফাটল ধরেছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের ভাঙন ঠেকাতে দেওয়া কংক্রিটের দেয়ালে। ওয়াকওয়ের নিচে সমুদ্রজুড়ে দেওয়া বড় বড় ব্লক তলিয়ে গেছে সমুদ্রের পানির বিশাল ঢেউয়ে। দ্রুত সংস্কার করা না গেলো সৈকতের বড় একটি অংশ পানিতে তলিয়ে সৌন্দর্য হারানোর শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগেও অনেকবার মোকাবেলা করেছি। কিন্তু এবারের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মতো ভয়ঙ্কর রূপ আগে দেখিনি। সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমাদের পতেঙ্গায় বেড়িবাঁধ টপকে আশপাশের এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।

তারা বলেন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইপিজেড, কাট্টলী রানী রাসমনিঘাট, জেলেপাড়াসহ আশপাশের এলাকা। এসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পানি হয়েছে। এমনকি মানুষের বাসাবাড়িতেও কোমরসমান পানি ঢুকে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দা।

সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার বাসিন্দা নাজমুল রাতুল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রাত ১১টার পর আমাদের এলাকায় পানি চলে আসে। বেড়িবাঁধ টপকে জোয়ারের পানি রাস্তাসহ অসংখ্য বসতঘরে ঢুকে যায়। অনেক দোকানেও পানি ঢুকে যায়। আশপাশের এলাকার অনেক মানুষকে রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে দেখছি।

পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা ইয়াছিন আরাফাত আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, তিনদিন আগে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামের দর্শনীয় কিছু স্থানে ঘুরতে আসি। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ঘুরে রাঙামাটি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সব পরিকল্পনা শেষ করে দিয়েছে। হোটেলে বসে সময় কাটাচ্ছি। ভাগ্য খারাপ। সকালে পতেঙ্গায় আসলাম। এসে দেখি সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। সবকিছু ভেঙে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। কোনো একদিন আবার সুযোগ হলে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসব। এখান থেকে আজকেই ঢাকা ফিরে যাব।

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের আশপাশের ব্যবসায়ীরা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে কয়েকদিন ধরে ব্যবসা খুব মন্দা যাচ্ছিল। এ কয়দিন পর্যটক আসেনি। এখনও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পুরো ফাঁকা।

তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ভাসমান অনেক খাবারের দোকান বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এমনকি মালামাল নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ হয়নি তাদের।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!