মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বাসভবন ‘গুডস হিল’ ঘেরাও করেছে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড’।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে নগরের চকবাজার থানার গনি বেকারি মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
কর্মসূচি চলাকালে সাকা চৌধুরীর বাসভবন গুডস হিলের গেটে প্রতীকী তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পরে প্রবেশপথের দেয়ালে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র-রাজাকার হিল’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় মৌলবাদীর ঠাঁই নাই’ লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করা হয়।
আরও পড়ুন: রাজাকাররাও ‘মুক্তিযোদ্ধা’—মির্জা ফখরুলকে নিয়ে শঙ্কায় হাছান মাহমুদ
এসময় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ শব্দগুলো আমাদের অস্তিত্ব। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সাকাকে তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ‘শহীদ’ বলা আমাদের লাল-সবুজের পতাকার অবমাননা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে সাকা চৌধুরীর ‘গুডস হিল’র বাড়িতে নির্যাতন করা হতো। পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো এই সাকা চৌধুরী। মূলত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পথপ্রদর্শক এবং বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘুদের গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন কুখ্যাত সাকা চৌধুরী। তার ছেলের রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের সামনে বড় নেতা হিসেবে উপস্থিত হয়নি। আজকে এখানে এসেছি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হিসেবে। আপনারা সঙ্গে থাকলে আমাদের হারানোর শক্তি কারো নেই। আওয়ামী লীগ সরকারকে বলতে চাই, ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর একা বাড়ি যেতে পারবেন না। প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে যেতে বাধ্য করা হবে। যাওয়ার আগে আমার বাবার সেই স্লোগান আপনাদের বলে যেতে চাই। ’
এরপর তিনি ‘নারায়ে তাকবির’ বলে তিন বার স্লোগান দেন। এসময় মাঠে উপস্থিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘আল্লাহ আকবর’ পাল্টা স্লোগানে সাড়া দেন।
হুম্মাম কাদের আরও বলেন, ‘আবার যখন আমরা এই পলোগ্রাউন্ড মাঠে আসবো, তখন সরকার গঠন করেই আসবো। ’
হুম্মাম কাদেরের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। স্বয়ং বিএনপির নেতারাও হুম্মাম কাদেরের বক্তব্যে ভিন্নমত পোষণ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা হুম্মাম কাদেরের একান্ত ব্যক্তিগত বক্তব্য। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিএনপি এর দায়ভার নেবে না। ’
প্রসঙ্গত, বিএনপির সমাবেশে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় সাকাপুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলা করে এক মাসের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তারসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতারা। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।