চট্টগ্রামে চোখ বেঁধে তরুণীকে ‘বিকৃত যৌনাচার’, দুই ভাইকে বাঁচাতে মরিয়া চসিক কাউন্সিলর বিপ্লব

বিয়ের পর চোখ, হাত, পা বেঁধে রেশমার (ছদ্মনাম) সঙ্গে সহবাস করতেন স্বামী। এভাবে একদিন সহবাস করার সময় হঠাৎ হাতের বাঁধন খুলে যায় রেশমার। চোখের কাপড় সরাতেই নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি! স্বামী তো নয়, রেশমার সঙ্গে সহবাস করছিলেন ভাসুর!

নগরের ফিরিঙ্গীবাজার এ ঘটনায় বিচার-সালিশও হয়। বিষয়টি ধামাচাপা ও বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত দুই ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের বিরুদ্ধে।

এদিকে জঘন্য এ ঘটনার বিচার চেয়ে অবশেষে আদালতের শরণাপন্ন হন ভুক্তভোগী ওই নারী। পাষণ্ড ভাসুর ও স্বামীর বিরুদ্ধে করেন মামলা। সেই মামলায় শনিবার (২২ অক্টোবর) রাত ১টায় অভিযুক্ত ভাসুর ও স্বামীকে ফিরিঙ্গিবাজার মসজিদ ভিটা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

পরদিন রোববার (২৩ অক্টোবর) ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজির করা হলে বিচারক মেহনাজ রহমান অভিযুক্ত দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার আসামিরা হলেন- নগরের কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার মসজিদ ভিটা এলাকার সোনা মিয়ার বাড়ির আব্দুল মোনাফের ছেলে ইব্রাহীম রনি (৩২) ও তাঁর ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম ইরফান (২৫)। তাঁরা ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অধীনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুরাদ এ মাওলা সোহেলের বরাবর মামলার আবেদন করেন ওই নারী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী সাজেদা বেগম সোনিয়া আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত ১৯ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার আবেদন করা হয়। আদালত মামলা গ্রহণ করে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য কোতোয়ালী থানাকে নির্দেশ দেন। থানা পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করলে কারাগারে পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ জুলাই ১০ লাখ টাকা পারিবারিক ব্যয়ে ভুক্তভোগী নারী রেশমার সঙ্গে সিরাজুল ইসলাম ইরফানের বিয়ে হয়। সাত লাখ টাকা দেনমোহর ও এক লাখ টাকা উসুলে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী ইরফান রেশমার চোখ-হাত-পা বেঁধে আলো নিভিয়ে বন্দী অবস্থায় সহবাস করতেন।

অভিন্ন কায়দায় গত ৫ সেপ্টেম্বর সহবাসের সময় রেশমার হাতের বাঁধন খুলে যায়। চোখ খুলতেই তিনি সামনে দেখতে পান ভাসুর ইব্রাহীম রনি! এ ঘটনার পর জেরা করলে রেশমার মোবাইল ফোন নিয়ে নেন ইরফান। এ ঘটনা কাউকে জানালে রেশমাকে খুন করার হুমকিও দেন স্বামী ইরফান।

পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর রেশমা তাঁর মাকে সব ঘটনা জানায়। জঘন্য এ ঘটনা শুনে তাঁর মা স্ট্রোক করেন। হাসপাতালে অসুস্থ মাকে দেখতে গেলে দুপক্ষের মধ্যে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে রেশমাকে রেখে চলে যান ইরফান।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে রেশমার পরিবার বাড়ির মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় কাউন্সিলরকে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু এতকিছুর পরও কোনো সমাধান মেলেনি।

রেশমার পরিবারের অভিযোগ, গোপনে বিষয়টি দফারফা করার চেষ্টা চালান ৩৩ নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব। জঘন্য এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তিনি এখনও নানা অপতৎপরতাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে আইনজীবী রুমেল পাল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কাউন্সিলর বেশ কয়েকবার বৈঠকে বসে দুপক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের হানিমুনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু হানিমুনে যাওয়া হয়নি তাদের। উল্টো দুভাই মিলে ধর্ষণ করেন রেশমাকে। এমন অত্যাচার সইতে না পেরে ভুক্তভোগী নারী শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নেন।

আইনজীবী সাজেদা বেগম সোনিয়া বলেন, ইব্রাহীম রনি বিবাহিত হলেও ঘৃন্য এ কর্মকাণ্ডের সময় তাঁর স্ত্রী-শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। তাছাড়া রনির স্ত্রী বেশিরভাগ সময় বাবার বাড়িতে থাকতেন। এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড দেখার পরও শাশুড়ি রিনা বেগম কোনো প্রতিবাদ করেননি। তিনি পুত্রবধূ রেশমাকে তার বাবার বাড়ি যেতে দিতেন না। বর্তমানে রেশমা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশের সহায়তায় ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি আছেন।

এদিকে কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের দাবি, সিরাজুল ইসলাম ইরফানের বিরুদ্ধে তিনি কঠিনতম পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করিয়েছেন ইরফানের।

রেশমার পরিবার বলছে, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ঘটনাটির বিচার করে দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব।

যোগাযোগ করা হলে হানিমুনের বিষয়টি স্বীকার করে কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমার কাছে যখন অভিযোগ নিয়ে এসেছিল আমি একটি সুন্দর সমাধানের চেষ্টা করেছি। তাদের কক্সবাজার হানিমুনে পাঠানোর জন্যে বলেছিলাম। কিন্তু ইরফানের পক্ষ থেকে ডিভোর্স লেটার পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে মেয়েপক্ষ মামলা করেছে।

তিনি বলেন, ইরফান শারীরিক মিলনে অপারগ, মেয়ে পক্ষের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ইরফানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছি। তাঁর কোনো শারীরিক সমস্যা নেই।

ইরফানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের কাছে আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!