চট্টগ্রামে চোখের পলকে ৪৫ লাখ টাকার মালামাল গায়েব, যেভাবে ছক কষেছিল ‘প্রতারক চক্র’

৪৫ লাখ টাকার মালামাল হাতিয়ে নিতে অভিনব এক ছক কষেছিল ‘প্রতারক চক্র’। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক প্রতারক সাজেন রিকশাচালক। এরপর কিছুদূর যেতেই বলেন— রিকশা বিকল হয়ে গেছে, একটু নামতে হবে।

রিকশা থেকে নামতেই শুরু হয় পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশ। চক্রের আরেক সদস্য ইচ্ছে করে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ফেলে দেন নিজের মোবাইল। এরপর শুরু করে দেন ঝগড়া। ঝগড়া যখন সমাপ্ত হয় ততক্ষণে গায়েব হয়ে গেছে ৪৫ লাখ টাকার মেডিকেল সরঞ্জাম!

ছক অনুযায়ী সবকিছু হলেও শেষ পরিণতিটা অবশ্য ভালো হয়নি। পুলিশের ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে ভেস্তে গেছে সব পরিকল্পনা। এক প্রতারকের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি উদ্ধারও হয়েছে গায়েব করে দেওয়া ৪৫ লাখ টাকার সেই মেডিকেল সরঞ্জাম।

মো. সুমন (৩৫) নামে ঘটনার মূলহোতা ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানা পুলিশ। বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাতে নগরের চট্টেশ্বরী মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একই মোড়ের গ্রামীণ জুয়েলার্সের সামনে থেকে জব্দ করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত রিকশাটিও। গ্রেপ্তার সুমন মাদারিপুর জেলার নয়াকান্তি ইউনিয়নের মৃত আক্কাসের ছেলে।

এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে নগরের কাজির দেউড়ি এসএ পরিবহন থেকে মেডিকেল সরঞ্জাম নিয়ে রিকশা করে সিএসসিআর যাওয়ার পথে চট্টেশ্বরী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, কার্ডিয়াক কেয়ার নামের এক মেডিকেল সরঞ্জাম সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানের সহকারী মার্কেটিং অফিসার ও চট্টগ্রাম প্রতিনিধি কাজী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। গত সোমবার তাঁর প্রতিষ্ঠান কার্ডিয়াক কেয়ারের ঢাকা অফিস থেকে ৫৮টি প্রতিস্থাপন যোগ্য হার্টের রিং/স্ট্যান্ট চট্টগ্রামের বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টারে সরবরাহের জন্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নগরের কাজির দেউড়ির এসএ পরিবহনে পাঠানো হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৪৫ লাখ টাকা। কাজী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এসএ পরিবহনে এসে দুটি কার্টুনে করে পাঠানো পণ্যগুলো গ্রহণ করেন।

পরে তিনি রাস্তায় এসে সিএসসিআর মেডিকেল সেন্টারে যাওয়ার জন্য একটি রিকশা ভাড়া করেন। রিকশায় চড়ে চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী মোড়ে এলে চালক হঠাৎ রিকশা বিকল হওয়ার কথা বলে তাকে রিকশা থেকে নামতে বলেন। গোলাম মোস্তফাও সরল বিশ্বাসে রিকশা থেকে নেমে রাস্তার একপাশে দাঁড়ালে হঠাৎ একজন অপরিচিত ব্যক্তি তাকে ধাক্কা দেন। এসময় ওই ব্যক্তি নিজের মোবাইলটি রাস্তায় ফেলে দিয়ে গোলাম মোস্তাফার সঙ্গে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হন। এরপর গোলাম মোস্তফা কিছু বুঝে উঠার আগে দেখতে পান তাকে বহনকারী রিকশাটি উধাও হয়ে গেছে। এরপর তিনি অপর এক রিকশা করে পণ্যগুলোর খোঁজে প্রথমে সিএসসিআর যান এবং সেখান থেকে পুনরায় কাজির দেউড়ি এসএ পরিবহন অফিসে আসেন। ততক্ষণে তিনি বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন। পরে তিনি এ ঘটনায় একইদিন রাতে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এরপর তদন্তে নেমে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের প্রায় ২৫টি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মামলার পর ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। টানা ৪৮ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে মূলহোতা মো. সুমনকে চট্টেশ্বরী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে কোতোয়ালী থানার আটমার্চিং মোড়ের ফোর স্টার ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে আত্মসাৎ করা মালামাল উদ্ধার করা হয়। এরপর চট্টেশ্বরী মোড়ের গ্রামীণ জুয়েলার্সের সামনে থেকে রিকশাটি জব্দ করা হয়।

ওসি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার সুমন তার সঙ্গে আরও ৩-৪ জন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এনইউএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!