চট্টগ্রামের ‘হুন্ডি আবু’র গোপন রহস্য, ২৪০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেপ্তারের হুলিয়া

একসময় রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন আবু আহমেদ। পরে জড়িয়ে পড়েন হুন্ডি ব্যবসায়। এভাবে টাকা পাচার করতে করতে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে, হয়ে যান টাকার কুমির। আবু আহমেদ থেকে তিনি হয়ে যান ‘সোনা আবু’।

তবে শেষ পর্যন্ত তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে করা হয় মানি লন্ডারিং মামলা। সেই মামলায় তাঁর জামিন বাতিল করেছেন আদালত। একইসঙ্গে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

রোববার (১৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁঞার আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আবুকে তিন সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া তার বিদেশযাত্রায়ও দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

জানা গেছে, হুন্ডি ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালানের অন্যতম গডফাদার চট্টগ্রামের আবু আহমেদের ৭২১ কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে আদালতে। স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় অভিযুক্ত আবু আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তাঁর অবৈধ অর্থের খোঁজ পায়। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত মোট ২১ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি।

সিআইডি জানিয়েছে, মূলহোতা আবু আহমেদ চট্টগ্রামে অর্থপাচার এবং সোনা ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছে। তাঁর সম্পদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন, প্লট, বিলাসবহুল বাড়ি। দুবাইতেও তাঁর তিনটি দোকান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে ফরহাদ ট্রেডিং, রিয়াল ট্রেডিং, নাইস টেলিকম সেন্টার, রূপা টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন আবু আহমেদ। এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লেনদেন হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা।

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের টাকা নিয়ে তিনি হুন্ডি ব্যবসা করেন। এছাড়া সোনা চোরাচালান করতে করতে তিনি পরিচিতি পান ‘সোনা আবু’ বা ‘গোল্ডেন আবু’ নামে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ মিলেছে তার নামে কেনা ২৪টি জমির। সেই সঙ্গে নগরেই আছে বিলাসবহুল অন্তত তিনটি বাড়ি!

এর আগে হাইকোর্টের দুই বিচারকের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় ধরা পড়ার পর ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (ফৌজদারি-২) বাদি হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আবু আহমদসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।

২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা পাচারের অভিযোগে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ মামলা হলেও আইনজীবীর মাধ্যমে আবু আগাম জামিন চাইলেন দু’বছর পর। এছাড়া তার কাছে আরও ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬৭ টাকা রয়েছে বলেও তদন্তে উঠে আসে।

এদিকে জামিন পাওয়ার পর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে একাধিকবার সময় নেন আবু। রোববার হাজিরা ও শুনানির দিন ছিল। সেদিনও তাঁর পক্ষের আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সেই আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি আদালতে বলেন, ‘সকলকে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুসরণ এবং মেনে চলতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থতার কথা বলে কালক্ষেপণ করছেন আসামি। অতএব সময় দেওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামির সময়ের আবেদন ও জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দেন আদালত।

আরএস/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!