চট্টগ্রামের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ম্যাক্সনের ‘রহস্যঘেরা’ মৃত্যু—নেপথ্যে ভারতীয় নারী?

ভারতের কলকাতায় চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যাক্সনের মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও পরিবারের দাবি, টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে ম্যাক্সনকে।

এদিকে পরিবারের সন্দেহের তীরে আছেন এক নারী। স্ত্রী পরিচয়ে ওই নারীর সঙ্গেই দীর্ঘদিন ভারতে বসবাস করছিলেন ম্যাক্সন। অভিযুক্ত সেই নারীর নাম অনামিকা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অনামিকার সহযোগিতায় তমাল চৌধুরী নামে ভারতে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করেন চট্টগ্রামের ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার নূর নবী ওরফে ম্যাক্সন। নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সাজা পরোয়ানাভুক্ত আসামিও তিনি।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে ম্যাক্সনের মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতা পুলিশের ধারণা, ম্যাক্সন ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।

তবে কলকাতার একটি সূত্র বলছে, এক নারী ম্যাক্সনকে খুনের পর লাশ ঝুলিয়ে রাখে। যদিও ম্যাক্সনের মৃত্যুর খবরটির বিষয়ে জানা নেই চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের।

অন্যদিকে একাধিক সূত্র বলছে, এটি আত্মহত্যা নয়, ম্যাক্সনকে খুন করা হয়েছে। পরিবারের পাশাপাশি প্রতিবেশীরও দাবি এটি। যদিও প্রতিবেশী কেউ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি নন।

এ বিষয়ে ম্যাক্সনের ভাই আকতার হোসেন বলেন, ম্যাক্সন ভারতে ছদ্মবেশে এক নারীর সঙ্গে স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করতেন। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালিগঞ্জে কখনও রঙমিস্ত্রি, কখনও মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ভারতে ম্যাক্সনের সঙ্গে থাকা সেই নারীই তাকে খুন করেছে।

তিনি বলেন, ভারতে পরিচয়পত্র বানাতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন স্ত্রী পরিচয়ে থাকা ওই নারী। তার দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আমরা চার লাখ টাকা পাঠাই। বাকি এক লাখ টাকা দিতে না পারায় ম্যাক্সনকে খুন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার রাতেও টাকার জন্য ফোন করেন ওই নারী। তার কথা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এরপর ম্যাক্সন অচেতন হয়ে পড়লে বালিশচাপায় খুন করে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয় ওই নারী।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ম্যাক্সন ভারতে থাকাকালীন তার বাংলাদেশি স্ত্রীর বেশ যাতায়াত ছিল সেখানে। ম্যাক্সনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। বর্তমানে ম্যাক্সনের লাশ কলকাতার এম আর বঙ্গুর হাসপাতালে রয়েছে।

সিএমপির একটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করে ম্যাক্সনের লাশ হস্তান্তরের আইনি সুযোগ রয়েছে। যদি তার পরিবার চাই তাহলে সম্ভব হবে। তবে ভারতে অনুপ্রবেশ, বেআইনিভাবে বসবাস এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরির অভিযোগে বারাকপুর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সেই দেশের পুলিশ। এ নিয়ে তৈরি হতে পারে আইনি জটিলতা।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারানগর থানার ডানলপ এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ম্যাক্সন। এরপর থেকে ছড়িয়ে পড়ে ম্যাক্সনের ভারতে অবস্থান খবর।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ম্যাক্সন নগরের বায়েজিদ থানার জাহানপুর এলাকার আলতাফ মিয়া বাড়ির আবদুল লতিফের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় ৭টি অস্ত্র মামলা, ১৫টি চাঁদাবাজিসহ ২২টি মামলা রয়েছে। এছাড়া অস্ত্র মামলায় ২১ বছরের সাজাও হয় তার।

২০১১ সালে একটি ডাকাতির মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মানিকজোড় খ্যাত ম্যাক্সনের সহচর সারোয়ারকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একে-৪৭ রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের পর আলোচনায় আসেন তারা। সেই মামলায় ২০১৭ সালে কারগার থেকে জামিনে বেরিয়ে কাতারে পালিয়ে যান দুজন।

২০১৯ সালে অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর ২০২০ সালে চাঁদার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কাতারে সরোয়ারের সঙ্গে ম্যাক্সনের মারামারির ঘটনায় সেই দেশের পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠিয়ে দেন। একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সারোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে এসময় ম্যাক্সনকে পাওয়া যায়নি।

আরও জানা যায়, বাংলাদেশে পাঠানোর সময় কাতার এয়ারপোর্ট থেকে কৌশলে ভারতে পালিয়ে যান ম্যাক্সন। সেখানে এক পরিচিতের মাধ্যমে তমাল চৌধুরী নামে মাছের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন চট্টগ্রামের এক সময়ের দুর্ধষ এই সন্ত্রাসী।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!