চট্টগ্রামের জালানীহাট রেলস্টেশনে রমরমা বাণিজ্য, পকেট ভারী হচ্ছে স্টেশন মাস্টারের

তদন্ত কমিটি ও চিঠি চালাচালিতে থমকে আছে নগরের জালানীহাট রেলস্টেশনের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান। রহস্যজনক কারণে উচ্ছেদে নেই কোনো পদক্ষেপ। গেল বছর ওই স্টেশনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও তদারকির অভাবে ফের দখল হয়ে গেছে। এছাড়া অভিযান পরিচালনায় বাজেট সংকটের কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন সময় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও স্টেশন মাস্টার আবদুস সালাম ভূঁইয়ার ইশারায় অভিযান থমকে আছে। তিনি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অভিযান বন্ধ করে রেখেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বাসা বাণিজ্য, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, বাজার বসানোসহ রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এই স্টেশন থেকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা ঢুকে তাঁর পকেটে।

সরেজমিন দেখা গেছে, স্টেশনের রেললাইন ঘেঁষে বসেছে কাঁচাবাজারসহ দুশতাধিক ভাসমান দোকান। আবার পাশেই গড়ে উঠেছে শতাধিক বাসাবাড়ি। এছাড়া রয়েছে গ্যারেজ, ভাঙারির গোডাউন, অটোরিকশা, ট্রাক, রিকশা ও ভ্যান গাড়ির অবৈধ পার্কিং।

আরও পড়ুন : ‘হাসি’ ফিরে পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ‘মোতালেব চাচা’

স্থানীয়রা জানান, রেললাইন ও আশপাশে গড়ে উঠা বাসাবাড়িতে দিনরাত বসে মদ-জুয়ার আসর। এছাড়া অসামাজিক কার্যকলাপ, চুরি-ছিনতাই এখানে নিত্যদিনের ঘটনা। ফলে সন্ধ্যা হলেই স্টেশনে আসা যাত্রী ও সাধারণ মানুষকে ভয়ে পথ চলতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসা ভাড়া নিতে অগ্রিম দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। আর মাসিক ভাড়া ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা।

এদিকে এসব ভাড়া বাসা থেকে বহিরাগতদের উচ্ছেদে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ বরাবর চিঠি দেন ষোলশহর রেলওয়ে জংশন ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম। দখল ও অনিয়মের খোঁজে ফেব্রুয়ারির শুরুতে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা-২ মো. ফেরদৌসকে আহ্বায়ক করে কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ ও সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা-১ মেহেদী হাসান। কিন্তু চিঠি চালাচালি ও তদন্ত কমিটিতে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান। আর এসবের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন স্টেশন মাস্টার আবদুস সালাম ভূঁইয়া।

স্টেশনের দোকানদাররা জানান, একেকটি দোকান ভাড়া নিতে অগ্রিম দিতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া দৈনিক ভাড়া ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন মো. জসিম প্রকাশ স্ক্র্যাপ জসিম, মো. আবু তৈয়ব, মো. শাহজাহান, মো. সাইফুল ও নুর মোহাম্মদ।

এছাড়া কাঁচাবাজার থেকে চাঁদা তোলেন গেটম্যান হাবিবুর রহমান, সাইফুল, জিয়া, কফিল, লিয়াকতসহ আরও কয়েকজন। ঘর ভাড়া ও বাজারের পানি নিয়ন্ত্রণ করেন সুজন ও টিটু। স্টেশন মাস্টারের সহযোগী হিসেবে আছেন লাভলী বড়ুয়া ও সজীব কান্তি পাল। এসব অবৈধ দখল বাণিজ্য থেকে প্রতিমাসে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা ঢুকে স্টেশন মাস্টার সালাম ভূঁইয়াসহ সহযোগীদের পকেটে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জানালীহাট স্টেশন মাস্টার আবদুস সালাম ভূইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও পাওয়া যায়নি সাড়া।

এরপর তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা-১ মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা সরকারি চাকরি করি। চাকরিতে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই সব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। আপনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করুন।

যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বলেন, আমরা গতবছর সেখানে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছিলাম। পরে সেগুলো তদারকির অভাবে আবারও দখল হয়ে গেছে। রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো গেলে দখল রোধ করা যেত। একই জায়গায় বারবার উচ্ছেদ করতে হলে বাজেটের প্রয়োজন। এরকম আরও অনেক জায়গা অবৈধ দখলে রয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেব।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!